ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বাগান ব্যবস্থাপকের দেয়া মামলা খারিজ

admin
  • আপডেট টাইম : জানুয়ারি ২৯ ২০২৩, ২০:৪৪
  • 596 বার পঠিত
ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বাগান ব্যবস্থাপকের দেয়া মামলা খারিজ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি  \ বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুদ্দত আলীর মালিকানাধীন সোনার বাংলা রাবার এন্ড ফ্রুটস প্রোডাক্ট প্রজেক্টের ভূমি নিয়ে রূপাইছড়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা খারিজ করেছে আদালত। গত ২৬ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা পাল এই খারিজের আদেশ প্রদান করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মনিরুল ইসলাম মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই আদালতে ১৪৪ ধারায় মামলা দায়ের করেছিলেন। এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশে বাহুবল উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি তদন্ত করে মামলায় উল্লেখিত জমির মালিক মুদ্দত আলী এবং তিনি সেখানে ভোগ দখলে আছেন বলে উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে মনিরুল ইসলামের আইনজীবী এডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বিজ্ঞ আদালতে নারাজি দেয়ার জন্য সময় প্রার্থনা করেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে মুদ্দত আলীর আইনজীবী এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান মামলাটি নথিভুক্তের প্রার্থনা করেন।বিজ্ঞ আদালত শুনানী শেষে বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য ধার্য্য করেন এবং ওইদিন মামলাটি তিনি খারিজের আদেশ প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মুদ্দত আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তার মালিকানাধীন প্রজেক্টে কার্যক্রম পরিচালনা করতে রূপাইছড়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম বারবার চাঁদা দাবী করে আসছেন। চাঁদা না পেয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দায়ের করেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে আমি হবিগঞ্জ আদালতে স্বত্ব মামলা দায়ের করলে হবিগঞ্জের সহকারী জজ আব্দুল হামিদ রূপাইছড়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম ও বিএফআইডিসি সিলেট জোনের মহা-ব্যবস্থাপক শোভন কান্তি সাহার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন। মনিরুল ইসলাম বাগানে যোগদান করার পরই সে আমার নিকট মাসে ৩০হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দিলে আমার প্রজেক্টে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না বলেও ঐ ব্যবস্থাপক হুমকি দেন। এমনকি আমার বৈধ মালিকানা ও লাইসেন্স থাকার পরও তথ্য গোপন করে ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম ও বিএফআইডিসি সিলেট জোনের মহা-ব্যবস্থাপক শোভন কান্তি সাহা জেলা প্রশাসক বরারব উচ্ছেদের আবেদন করেন। পাশাপাশি মিথ্যা মামলাও দায়ের করেন।
তিনি আরও বলেন, আমি বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে বাদী হয়ে সহকারী জজ আদালত বাহুবলে স্বত্ব ১৫১/২২ মামলা দায়ের করি। মামলায় রূপাইছড়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার গাইটাল গ্রামের আঃ সালামের ছেলে মনিরুল ইসলামকে ১নং বিবাদী করা হয়। তার সাথে বিবাদী করা হয় বিএফআইডিসি সিলেট জোনের মহা-ব্যবস্থাপক শোভন কান্তি সাহাকে। এই মামলায় গত ২৮ নভেম্বর দীর্ঘ শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করেন।
মুদ্দত আলী বলেন, চাঁদা না দেয়ায় রূপাইছড়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম ও বিএফআইডিসি সিলেট জোনের মহা-ব্যবস্থাপক শোভন কান্তি সাহা আমাকে হয়রানী করতে এবং আমার প্রজেক্টে কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদেরকে ভূল তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করিয়েছেন। এখন আদালতের আদেশে আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। এই আদেশে রূপাইছড়া রাবার বাগানের অসাধু কর্মকর্তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের রূপাইছড়া রাবার বাগান সংলগ্ন ববানপুর মৌজার ১নং এসএ খতিয়ানভূক্ত ৬/১০ নং দাগের ৩ একর ভূমি স্থানীয় ভবানীপুর গ্রামের জনৈক মতিবুর রহমান ১৯৮৫ সালের ১৬ মে সরকার কর্তৃক স্থায়ী বন্দোবস্তপ্রাপ্ত হন। বন্দোবস্ত দলিলের শর্তানুযায়ী ১৫ বৎসর অতিবাহি হওয়ার পর মতিবুর রহমান উক্ত ভূমির স্থায়ী মালিক হন। তিনি নিষ্কন্টক মালিক হওয়ার পর নামজারী মোকদ্দমার মাধ্যমে উক্ত ভূমি মতিবুর রহমানের নামে ১/৩১নং নামজারী খতিয়ান ভূক্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মতিবুর রহমান ২০০৭ সনের ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭/২০০৭ইং নং রেজিস্ট্রি দলিলমূলে পুটিজুরী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মুদ্দত আলীর নিকট বিক্রি করে নিঃস্বত্ত¡বান হন। একই খতিয়ানভূক্ত ৬/৪৯৮ নং দাগের ১.৪৭ একর ভূমি আহমদ হোসেন ১৯৭৬ সনের ১৫ মে সরকার কর্তৃক স্থায়ী বন্দোবস্তপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে তার ওয়ারিশানরা নামজারী সম্পন্ন করে উক্ত ভূমি ২০০৯ সনের ২৯ মার্চ ৮৭৬/২০০৯ইং রেজিস্ট্রি কবলামূলে মোঃ মুদ্দত আলীর নিকট বিক্রি করেন। একই খতিয়ানভূক্ত ৬/৪৭৬ নং দাগের ১.৪০ একর ভূমি মছন মিয়া ১৯৭৬ সনের ১৯ জুন সরকার কর্তৃক স্থায়ী বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে তার ওয়ারিশানরা নামজারী সম্পন্ন করে উক্ত ভূমি বিগত ২০০৮ সনের ৫ মে ১৭৫০/২০০৮ইং রেজিস্ট্রি কবলামূলে মোঃ মুদ্দত আলীর নিকট বিক্রি করেন। একই খতিয়ানভূক্ত ৬/৫১২ নং দাগের ১.৪০ একর ভূমি আব্দুল গনি ১৯৭৬ সনের ১৯ জুন সরকার কর্তৃক স্থায়ী বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে তার ওয়ারিশানরা নামজারী সম্পন্ন করে উক্ত ভূমি বিগত ২০০৯ সনের ২৫ মে ১৫৩০/২০০৯ইং রেজিস্ট্রি কবলামূলে মোঃ মুদ্দত আলীর নিকট বিক্রি করেন। এই ৪ দাগের সর্বমোট ৭.২৭ একর ভূমি রেজিস্ট্রি দলিলমূলে ক্রয় করে যথাক্রমে ১৩৬নং খতিয়ানে ৩০১, ৩০০, ২৯৯ দাগে আর.এস রেকর্ড সম্পন্ন করে ক্রেতা মোঃ মুদ্দত আলী সরকারের খাজনাদি পরিশোধ করতঃ “সোনার বাংলা রাবার এন্ড ফ্রুটস প্রোডাক্ট প্রজেক্ট” নামে একটি বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। এই বাগানের উত্তরে রাস্তা ও ইমাম চা বাগান, দক্ষিণে শ্মশানছড়া, পূর্বে রুপাইছড়া রাবার বাগান এবং পশ্চিমে আশ্রায়ন প্রকল্প পেইজ-২ পয়রা টিলা ও উত্তর ভবানীপুর গ্রাম অবস্থিত।
বাংলাদেশ রাবার বোর্ড-এর চেয়ারম্যান প্রশান্ত ভূষণ বড়–য়া রাবার বাগানগুলোর আয়তন ও উৎপাদিত কাঁচা রাবারের পরিমাণ তথ্য ছকে সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বিগত ২০১৪ সনের ১৯ মার্চ জেলা প্রশাসকদের পত্র প্রেরণ করেন। এ প্রেক্ষিতে পুটিজুরী ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশীলদার) ওই বছরের ৮ মে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত প্রতিবেদনে তিনি জানান যে, মোঃ মুদ্দত আলী প্রতিষ্ঠিত “সোনার বাংলা রাবার এন্ড ফ্রুটস প্রোডাক্ট প্রজেক্ট (প্রাঃ)” নামক বাগান থেকে প্রতিদিন ১০০ কেজি কাঁচা রাবার উৎপাদন হয়ে আসছে।
স¤প্রতি বাগানটির উপর নিকটবর্তী রূপাইছড়া রাবার বাগানের ম্যানেজার মনিরুল ইসলামের কুনজর পড়ে এবং সেখান থেকে লাভবান হওয়ার আশায় তিনি বাগান মালিক মোঃ মুদ্দত আলীর নিকট চাঁদা দাবি করেন এবং হুমকী-ধামকী প্রদান করেন। খরিদা ভূমিতে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মুদ্দত আলীর প্রতিষ্ঠিত বাগানটি আত্মসাতের নিমিত্তে তিনি জোরেবলে দখলের হুমকী প্রদান করেন। ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম-এর নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তার অধিনস্ত সাড়ে ৩শ শ্রমিক কর্মচারী এবং অস্ত্রধারী আনসার থাকায় তিনি নিজেকে শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর মনে করে এই তৎপরতা চালান। তাদের দ্বারা তিনি মুদ্দত আলীর বাগানটি দখল করে নিতে পারেন মর্মে সহকারী জজ আদালত বাহুবল-হবিগঞ্জ-এ মুদ্দত আলী বাদী হয়ে ১৫১/২২নং স্বত্ব মোকদ্দমা দায়ের করেন। শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন।
এদিকে রূপাইছড়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন অনিয়ম ও সরকার বিরোধী তৎপরতার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সনের ৮ এপ্রিল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কয়েকটি ছবিযুক্ত করে জনৈক কবির হোসেন তার ফেসবুকে একটি আপত্তিকর পোস্ট করেন। পরদিন রূপাইছড়া রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম এই আপত্তিকর পোস্টের প্রতি একমত পোষণ করে নিজের ফেসবুকে শেয়ার দেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাতগাঁও রাবার বাগানের শ্রমিক নেতা আরজদ আলী বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনের ২০০৬ (সংশোধনী/১৩) এর ৫৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১৬, তাং- ১২/০৪/২০১৭ইং। জিআর নং ১০৮/১৭(শ্রীমঙ্গল)। এই মামলায় তিনি কারাভোগ করেন।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর