হবিগঞ্জে ঐতিহ্যের ‘পলো উৎসব’

admin
  • আপডেট টাইম : জানুয়ারি ২৮ ২০২৩, ২০:৫৮
  • 606 বার পঠিত
হবিগঞ্জে ঐতিহ্যের ‘পলো উৎসব’

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি \ বিল-ঝিলের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ‘পলো বাওয়া উৎসব’। তবে একেবারে যে হারিয়ে যায়নি তা প্রমাণ করতেই বুঝি হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে হয়ে গেল এই উৎসব। উপজেলার বড়আন বিলে আয়োজন করা হয় ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছরই এই বিলে পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করেন আতুকুড়া গ্রামবাসী। এতে আশপাশের গ্রামগুলো ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে শত শত শৌখিন ও পেশাদার মাছ শিকারি অংশ নেন।
গতকাল শনিবার ভোর হতেই ঘন কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে বড়আন বিলে আসতে থাকেন হাজারও মাছ শিকারি। সকাল ১১টা বাজতেই কোমর ও মাথায় গামছা বেঁধে পলো নিয়ে মাছ শিকারে বিলের শীতল পানিতে নেমে পড়েন নানা বয়সী মানুষ।
পলোর পাশাপাশি হাতাজাল, উড়াল জালসহ মাছ ধরার নানা ফাঁদ নিয়ে হই-হুল্লোড় আর হাসি-আনন্দে মাছ ধরায় মেতে ওঠেন অনেকে। বিলের আশপাশের গ্রাম ছাড়াও হবিগঞ্জ সদর, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার পেশাদার ও শৌখিন মাছ শিকারিরা পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন।
শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিভিন্ন পেশার মানুষ এই মাছ করা উৎসবে অংশ নেন।
দুই ঘণ্টাব্যাপী এই মাছ ধরা উৎসবে ধরা পড়ে বোয়াল, আইড়, শোলসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। অনেকে বড় মাছ ধরতে না পারলেও এমন উৎসবে অংশ নিতে পেরেই খুশি।
পলো উৎসবে নাগুড়া থেকে আসা রবিন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১০ বছর তখন থেকে এই বড়আন বিলে পলো বাওয়া উৎসবে আসি। তখন বাবার সঙ্গে আসতাম, এখন নাতিকে নিয়ে আসছি। শত শত বছর ধরে এই বিলে পলো উৎসব চলে আসছে।’
বড় একটি বোয়াল মাছ ধরেছেন ফয়েজ মিয়া। খুশিতে আত্মহারা এই মাছ শিকারি বলেন, ‘আমি আজ জীবনের প্রথম পলো উৎসবে এসেছি। প্রথমবার এসেই একটা বড় মাছ ধরতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে।’
হবিগঞ্জ সদর থেকে মাছ ধরতে আসা দোকান কর্মচারী পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই আমরা দোকানের ৮ জন গ্রাম থেকে পলো নিয়ে মাছ ধরতে আসছি। মাছও কয়েকটা ধরেছি। সব মিলিয়ে খুব ভালো লেগেছে।’
আতুকুড়া গ্রামের সাংবাদিক এস এম সুরু আলী বলেন, ‘এক সময় হবিগঞ্জের বিভিন্ন বিলে পৌষ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা হতো। কিন্তু দিন দিন নদী ও বিল ভরাট এবং দখল হওয়ার কারণে হারাতে বসেছে গ্রাম-বাংলার প্রাচীন এই ঐতিহ্য।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আয়োজক কমিটির সদস্য সুমন আখঞ্জি বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর বড়আন বিলে পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করে থাকি। গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্য সময় পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঙালি গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই আমাদের এমন আয়োজন।’

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর