ভ্রমণে মুগ্ধ শায়েস্তাগঞ্জের টুটুল

admin
  • আপডেট টাইম : জানুয়ারি ২৫ ২০২৩, ২১:৪১
  • 586 বার পঠিত
ভ্রমণে মুগ্ধ শায়েস্তাগঞ্জের টুটুল

আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ \
জীবন একটি যাত্রা, কোন গন্তব্য নয়! ভ্রমণ কখনো অর্থের নয়, সাহসের বিষয়! আর এ ভ্রমণ যদি হয় শান্তির, তাহলেই হৃদয়ে মিলে পূর্ণ্যতা। যদিও কথাগুলো মনীষীদের। তবে একটি ক্ষুদ্র জীবনের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস কথাগুলোর বাস্তবতা দেখা দিয়েছে ঢাকার এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোঃ সাইফুল ইসলাম টুটুলের সাহসী ভ্রমণ কাহিনীতে। সম্প্রতি দেশের ৬৪টি জেলা ভ্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তিনি। ইতিমধ্যে ৫৫টি জেলায় ভ্রমণ করেছেন। বাকি জেলা গুলো কিছুদিনের মধ্যেই ভ্রমণ করবেন বলে জানান তিনি। টুটুল একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। তিনি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বড়চর গ্রামের মৃত আব্দুস সোবান-এর ছেলে। চাকুরীর সুবাদে তিনি এখন বসবাস করছেন গাজীপুরে। টুটুল জেলায় জেলায় ঘুরে ভ্রমন অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি বাড়িয়ে দিচ্ছেন মানবতার হাত। নতুন জেলায় প্রবেশ করেই একটি করে গাছ রোপন করছেন। দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছেন খাবার এবং পড়নের কাপড়। এতে আনন্দিত টুটুল। ভ্রমণ শেষে খুশি মনেই টুটুল ফিরেন নিজ জেলা হবিগঞ্জ এবং গাজীপুরে।
গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারী) হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারী কলেজ প্রাঙ্গন এলাকার শিরিষ তলায় চায়ের আড্ডায় তার ভ্রমণ কাহিনীর গল্প বলেন টুটুল। টুটুল বলেন, ‘আমার কিছু না বুঝে ওঠা শৈশব আর উন্মাতাল কৈশোরের সময়টা কেটেছে গ্রামে। আমি সর্বপ্রথম ২০০৬ সালে নিজ জেলা থেকে অন্য জেলায় পা রাখি। তখন আমি খুব ছোট। সিলেট টু ঢাকা সৌদিয়া বাসে করে যাচ্ছিলাম। বাসে বসেই প্রকৃতির এই অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করি। এত লম্বা ভ্রমণের একটা মিনিটও আমি বাসের ভেতরে চোখ রাখতে পারিনি। শুধু চারপাশ দেখার চেষ্টা করেছি। তখন থেকেই মূলত আমার ভ্রমণের ইচ্ছা জাগে। একটা পর্যায়ে পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু হল চাকরি জীবনের অধ্যায়। প্রাইভেট সেক্টরের চাকরি তাই জীবন একটা সময়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠলো। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখনই মাথায় ঘুরপাক খেল ভ্রমণ করা যায়। যেহেতু চাকরি করি, ঈদের ছুটি ছাড়া ভ্রমণের দীর্ঘ সময় নাই। তারপরও সবকিছু ম্যানেজ করে শুরুতে বছরে দুই বার দূরে কোথাও ঘুরতে যাই। এতে যেন দুর্বিষহ জীবনে কিছুটা প্রশান্তি আসে। আমার অনেক আগে থেকেই ৬৪ জেলা ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল। তবে তা বাস্তবে রুপ দিতে পেরেছি ২০২২ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে। প্রায় ২ মাসে আমি ভ্রমণ করেছি ৫৫টি জেলা। এতে আমি প্রতিটি জেলায় ১টি করে গাছ রোপন করেছি। তাছাড়া চা, পানি এবং পান খাওয়ার পাশাপাশি আমি প্রতিটি জেলায় নামাজ পড়ার চেষ্টা করেছি। নামাজের ওয়াক্তের তারতম্য হওয়ায় কয়েকটি জেলায় তা সম্ভব হয়নি। সেই সাথে অসহায় ও সাধারণ মানুষদের সাথে একবেলা ভাত খেয়েছি এবং সামর্থনুযায়ী প্রতিটি জেলায় ১ জন মানুষকে পোষাক দিয়েছি। গাড়িতে চড়ার সময় মাদ্রাসা পড়ুয়া অসহায় শিক্ষার্থীদের ভাড়া দিয়েছি। এতে আমি ভ্রমণের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের ভালবাসা পেয়েছি।
আমার এই ভ্রমণে বন্ধুরা ও আমার ছোট বোন সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। মা তেমন একটা চাইতেন না যে আমি এভাবে ঘুরে বেড়াই। সবসময়ই বলতেন দেশের অবস্থা ভাল না, চারদিকে এত দুর্ঘটনার কথা শুনি। তারপরও মা’কে অনেক কিছু বুঝিয়ে বের হতাম আর ফোনে আপডেট দিতাম কোথায় আছি কি করছি।
সাগর, নদী, পাহাড়, হাওর আমাকে মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করেছে। তা ভুলতে পারছি না। দেখেছি ইট পাথরের দালান এবং ঝিঁঝিঁ ডাকা সন্ধ্যার গ্রাম। দেশের বেশিরভাগ যানবাহনই ব্যবহার করেছি। বাদ যায়নি বিমানও। দেখেছি বিভাগীয় রেলওয়ে স্টেশন এবং কোন গ্রামের মধ্য দিয়ে চলমান রেললাইন রুপকথার মতো চন্দ্রদিঘলিয়া স্টেশনে থেমে যাওয়া। যেন তার চন্দ্রদিঘলিয়া ছেড়ে যাওয়া বারণ। পথিমধ্যে কুমিল্লায় দেখা হয়েছে ভারতীয় নাগরিক মিঃ সঞ্জয় বানজারা নামে এক যুবকের। যিনি ভারতের সবগুলো প্রদেশ বাইসাইকেলে চড়ে ঘুরেছেন। এসেছেন বাংলাদেশেও। পাবনার ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহী যাবার পথে দেখা হয়েছে দুইজন রাশিয়ান নাগরিকের সাথে। ভ্রমণ শিডিউল মিলে যাওয়ায় একসাথে ঘুরেছি কয়েকটি জায়গা।
পাথর, পানি আর পাহাড় এ তিন নিয়ে সিলেটের ভোলাগঞ্জ। সাদা পাথরের ছড়াছড়ির জন্য ভোলাগঞ্জকে সাদা পাথরের দেশ বলা হয়। কাছে থেকে দেখেছি শরৎ মৌসুম না হলেও আকাশের গায়ে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘ। এ যেন প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য। হাওর মানে বিশাল আকাশ বিশাল জলাভূমি, হাওর মানে প্রচুর ফসল বিশাল প্লাবন ভূমি। দেখেছি চলনবিল, হাকালুকি এমনকি টাংগুয়ার হাওর। শারীরিক শক্তিবর্ধক হল পুষ্টিকর খাবার কিন্তু মনের শক্তিবর্ধক এক কাপ গরম চা আর তার দীর্ঘস্থায়ী আমেজ। বিস্তৃত চা বাগান দেখেছি যেখানে সবুজের সমারোহ। মেঘের অনেক রং, কখনো সে দুধের মত সাদা, কখনো বা ধূসর কালো, আবার কখনো লালচে আভা মিশে থাকে মেঘের গায়ে, তবুও সব রঙেরই যেন ভিন্ন মাধুর্যতা রয়েছে। মেঘের সেই সৌন্দর্য উপভোগ করেছি খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালিতে। যেখানে শুধু মেঘ আর মেঘ। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনের সমৃদ্ধ ভাÐার এ দেশের ইতিহাস বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রাচীন আমলে নির্মিত জমিদার বাড়ি, মসজিদ বিভিন্ন বিহার বরাবরের মতোই কাছে টেনেছে। সোনারগাঁওয়ে ইশা খাঁ’র আমলের তৈরি বাড়িগুলো এখন লোকশিল্প যাদুঘর করা হয়েছে। হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখড় থাকে জায়গাটি। আজকের বাংলাদেশ তখনো অনেক সমৃদ্ধ ছিল এইসব প্রাচীন নির্মাণ দেখে বুঝতে পেরেছি। আমার সাইকেল চালানো খুবই শখ ছিল। সে শখ থেকে বিভিন্ন সাইকেল রাইডিং ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করেছি। দু’ চাকায় বাংলাদেশ দু’চোখে বাংলাদেশ’ এই ¯েøাগানে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত সাইকেল চালিয়েছি। আমি আমার এই ভ্রমণ চালিয়ে রাখব যতটা সম্ভব। যদিও ভ্রমণ কখনো শেষ হয় না। দেশ দেখা শেষ করে, বিশ্ব দেখারও আশা করছি’।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর