হবিগঞ্জে মৎস্য কর্মকর্তার মামলায় দুই সাংবাদিকের জামিন

admin
  • আপডেট টাইম : নভেম্বর ২৮ ২০২২, ২০:৪৯
  • 579 বার পঠিত
হবিগঞ্জে মৎস্য কর্মকর্তার মামলায় দুই সাংবাদিকের জামিন

আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ  \

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সাবেক সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দুই সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁরা হলেনÑ হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মাছরাঙা টেলিভিশনের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি চৌধুরী মো. মাসুদ আলী ফরহাদ এবং দৈনিক খোয়াই’র প্রধান প্রতিবেদক ও বাংলানিউজের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি বদরুল আলম।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবুল কাশেম এই দুই সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর করেছেন। সাংবাদিকদের পক্ষে মামলার শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মার্জিনা আমিন চৌধুরী ডায়না, অ্যাডভোকেট সামিউল হক ও অ্যাডভোকেট দেওয়ান মিনহাজ গাজী।
বানিয়াচং ও নবীগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় বিস্তর অভিযোগ ওঠে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগও দিয়েছেন ৮৯ জন ভুক্তভোগী।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মোহাম্মদ আলম নবীগঞ্জের কুর্শি কার্প হ্যাচারিতে কর্মরত অবস্থায় প্রতি বছর হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় পোনা মাছ সরবরাহের মাধ্যমে দুর্নীতি করেছেন। ৩৮ লাখ টাকা লোপাট করেছেন ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পুকুর পুনঃখনন বাবদ। আত্মসাৎ করেছেন যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ প্রায় তিন ৩ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে ১১টি উপজেলায় পোনা সরবরাহ করলেও সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন সামান্য টাকা।
এছাড়া সরকারি হ্যাচারির নিজস্ব পোনা বিক্রি করে নি¤œমানের হ্যাচারি থেকে রেনু পোনা সংগ্রহ করেন তিনি। একই সঙ্গে টার্গেটের অতিরিক্ত রেনু, পোনা ও মাছ বিক্রির টাকা যায় তারই পকেটেই। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পুকুর পুনঃখনন দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন সরকারি অর্থ। হ্যাচারির সামনে খোলা জায়গা অনুমোদন ছাড়া বহিরাগত লোকদের কাছে লিজ দিয়ে সব্জি চাষের ব্যবস্থা করে হাতিয়েছেন আরও টাকা। শুধু এসবই নয়, মোহাম্মদ আলম হ্যাচারির বড় বড় গাছ বিক্রির মাধ্যমেও লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় ওই অভিযোগপত্রে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে অফিস মেরামত দেখিয়ে লুটপাট করেন মোহাম্মদ আলম। সরকারি কোয়ার্টার ব্যবহারে সম্মানি থেকে বিধি মোতাবেক বাড়ি ভাড়া কর্তনের নিয়ম থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি তা করেননি। এছাড়া ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসে রাজস্ব ও প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা কোনো কাজ না করেই ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করেন।
এছাড়া মোহাম্মদ আলম বানিয়াচং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ও লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয় আবেদনে।
এদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম দীর্ঘদিন এক কর্মস্থলে চাকরির সুবাধে বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন, এমন অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন অভিযুক্ত আলম। কিন্তু এখতিয়ার বহির্ভুত হওয়ায় মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত।
পরবর্তীকালে তিনি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মাছরাঙা টেলিভিশনের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি চৌধুরী মো. মাসুদ আলী ফরহাদ ও বাংলানিউজের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বদরুল আলমসহ কয়েকজনকে। এরপর সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করে হবিগঞ্জ সিআইডি।
মামলার পর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে আন্দোলন করেছে হবিগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ। বিভিন্ন কর্মসূচি দেন তাঁরা। মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও রিপোর্টার্স ইউনিটির ব্যানারে। তাতে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মৎস্য কর্মকর্তা আলমের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানান।
এদিকে দুর্নীতির বিস্তার অভিযোগ ওঠার পর মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমকে বরিশালের আগৈলঝড়া উপজেলায় বদলি করে সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে বিবাদে জড়ালে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর