স্তম্ভিত আর্জেন্টিনা, খুশি সৌদি আরব

admin
  • আপডেট টাইম : নভেম্বর ২২ ২০২২, ২১:১১
  • 599 বার পঠিত
স্তম্ভিত আর্জেন্টিনা, খুশি সৌদি আরব

দুদিন পর দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুদিবস। আর্জেন্টিনার পতাকা যর হাতে দিয়ে গেছেন তিনি, সেই লিওনেল মেসি মাঠে নামার পর আকাশের দিকে তাকালেন।

মেসি কী ম্যারাডোনাকে খুঁজলেন? শেষ বাঁশি বাজার পর আর্জেন্টিনা অধিনায়কের দৃষ্টিতে যতটা না হতাশা, তার চেয়ে অনেক বেশি অবিশ্বাস। কাতার বিশ্বকাপের তৃতীয়দিনেই যেন আরব্য রজনী।

৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে মাঠে নামা মেসির আর্জেন্টিনা সবুজাভ সৌদি আরবের কাছে হেরে স্তম্ভিত। লুসাইলে মঙ্গলবার যেন মিসাইল ছুড়ল সৌদি আরব। অঘটন বললে কম বলা হবে। এ যেন মহাঅঘটন!

ম্যাচের আগে চায়ের কাপে ঝড়ের বিষয়বস্তু ছিল, আর্জেন্টিনা কয় গোলে জিতবে। তখন কে জানত, আর্জেন্টিনার দুখী রাজপুত্রের শেষের শুরুর পাণ্ডুলিপি বেদনার নীল রঙে লিখে রেখেছেন ফুটবল বিধাতা। মঙ্গলবার লুসাইলে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সীমারেখা যেন মুছে দিল ফিফা র‌্যাংকিংয়ের ৫১ নম্বরে থাকা সৌদি আরব।

মেসির শেষ বিশ্বকাপ শুরু হলো অভাবনীয় হার দিয়ে। ফিফা র‌্যাংকিংয়ের তিনে থাকা আর্জেন্টিনাকে এবার শিরোপার অন্যতম বড় দাবিদার ভাবা হচ্ছে। ম্যাচে তাদের শুরুটা ছিল ফেভারিটের মতোই। অফসাইডে তিনটি গোল বাতিল না হলে প্রথমার্ধেই ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা।

অফসাইড দুর্ভাগ্যের আগে ১০ মিনিটে পারেদেসের আদায় করা পেনাল্টি থেকে রেকর্ডরাঙা গোলে দলকে এগিয়ে দেন মেসি। আর্জেন্টিনার প্রথম ফুটবলার হিসাবে চারটি বিশ্বকাপে গোল করলেন পিএসজির এই মহাতারকা। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে এটি মেসির সপ্তম গোল, আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৯২তম।

এগিয়ে যাওয়ার পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। কিন্তু রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত সৌদিরা কৌশলে পেতে রেখেছিল অফসাইডের ফাঁদ। সেই ফাঁদে পড়ে ২২ থেকে ৩৫ মিনিটের মধ্যে মেসির একটি ও লাওতারো মার্তিনেজের দুটি গোল বাতিল হয়। এরপর অফসাইড এড়াতে মেসিরা একটু নিচে নেমে থাকায় আক্রমণের ধার কমে যায় আর্জেন্টিনার। প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষের গোলমুখে একটিও শট নিতে না পারা সৌদি আরব দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পাঁচ মিনিটের ঝড়ে স্তব্ধ করে দেয় কোপা চ্যাম্পিয়নদের।

৪৮ মিনিটে প্রতি আক্রমণে সালেহ আল শেহরি ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর ৫৩ মিনিটে ডান পায়ের নিখুঁত শটে সৌদি আরবকে এগিয়ে দেন আরেক ফরোয়ার্ড সালেম আল-দাউসারি। পুরো ম্যাচে সৌদির এই দুটি শটই শুধু লক্ষ্যে ছিল। পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণের ঝড় তুলেও সৌদির জমাট রক্ষণ আর ভাঙতে পারেনি আর্জেন্টিনা।

মেসি, দি মারিয়া, তালিয়াফিকো, হুলিয়ান আলভারেজের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ করে দেন সৌদি গোলকিপার মোহাম্মদ আল-ওয়াইস। চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে অন্তত পাঁচটি গোল বাঁচিয়েছেন তিনি। যোগ করা সময়ে, আলভারাজের শট একদম গোললাইন থেকে হেডে ক্লিয়ার করে আর্জেন্টিনাকে হতাশায় ডোবান সৌদির ডিফেন্ডার আল আমরি। শেষ বাঁশি বাজার পর লুসাইলের গ্যালারিতে ওঠা সবুজ ঢেউ আকাশী-নীলকে বানিয়ে দেয় বিষাদের রঙ। আরব বিশ্বের মাটিতে ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপে প্রথম অঘটনের জন্ম দিল মধ্যপ্রাচ্যেরই একটি দল। সৌদি আরবের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় জয়ে অমরত্বের পথে মেসির যাত্রা পথটা শুরুতেই হয়ে গেল বন্ধুর। শেষ ষোলোতে যেতে এখন মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প থাকল না আর্জেন্টিনার সামনে।

এর আগে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ছয়টি ম্যাচে হেরেছিল। যার মধ্যে একবার ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা ফাইনালেও খেলেছিল। ১৯৩৪ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সুইডেনের কাছে ২-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় তারা। নকআউট বিশ্বকাপ থাকায় আর কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি তাদের। ১৯৫৮ সালেও প্রথম ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির কাছে ১-৩ গোলে হেরেছিল আলবিসেলেস্তারা। ১৯৭৪ সালে প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে হারে ২-৩ গোলে।

এরপর ১৯৮২ বিশ্বকাপেও তারা প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে ০-১ ব্যবধানে হেরে যায়। ১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্বকাপে ট্রফি জয়ের দাবিদার হিসাবে নেমেছিল আর্জেন্টিনা; কিন্তু সেবার ক্যামেরুনের কাছে প্রথম ম্যাচে ০-১ গোলে হেরে যায় ম্যারাডোনার দল।

কিন্তু সেই হারের ধাক্কা সামলে একের পর এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় লা আলবিসেলেস্তারা। এবারও হার দিয়ে শুরু আর্জেন্টিনার। এবার কি মেসি দোহায় ফেরাতে পারবেন ম্যারাডোনার স্মৃতি!

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর