দুর্নীতিতে ডুবছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর

admin
  • আপডেট টাইম : নভেম্বর ১১ ২০২২, ২২:০১
  • 586 বার পঠিত
দুর্নীতিতে ডুবছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক/ সরকারি অর্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ সংস্থা ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে’ (ইইডি) চলছে নানান অনিয়ম। একশ্রেণির প্রকৌশলী এই প্রতিষ্ঠানটিকে টাকা কামানোর মেশিনে পরিণত করেছেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে নিম্নমানের উপকরণে নির্মিত হচ্ছে ভবন। অবস্থা এমন যে, উদ্বোধনের আগেই কোনো কোনো ভবন হেলে পড়ছে। কোথাও বছর না যেতেই খসে পড়ছে প্রতিষ্ঠানের পলেস্তারা।

রহস্যজনক কারণে একই ব্যক্তির কব্জায় ছিল ৩ ডজনের বেশি প্রকল্প। এনিয়ে হইচইয়ের পর এখনও তিনি ১১টি প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবশ্য মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তারই শাখার অন্য তিন প্রকৌশলীকে সাক্ষী করা হয়েছে। এছাড়া আরও এক শীর্ষ পর্যায়ের প্রকৌশলীও মামলার আসামি। যুগান্তরের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে একটি চক্র আছে। বছরের পর বছর তারা প্রধান কার্যালয়ে প্রায় ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। যে কারণে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া সহজ হয়েছে। তারা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ইইডিতে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয় অবগত। যে কারণে ৪ নভেম্বর এ সংস্থার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রকৌশলীদের সততা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

অন্যদিকে ইইডির দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরও যথাযথ প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীদের কেউ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কেউবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাওয়া আর্থিক ও নির্মাণ দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে এই মুহূর্তে ৭টি তদন্ত চলমান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ইইডিতে কোনো চক্র আছে বলে তার জানা নেই। কয়েকজনের হাতে বেশকিছু প্রকল্প আছে। সেগুলো তিনি দায়িত্বে আসার আগেই বণ্টন হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় কেন কিছু লোকের হাতে বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা তিনি জানেন না। অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অভিযোগ তদন্তাধীন আছে কিনা-সেটা তার জানা নেই। তবে তিনি দায়িত্বে আসার পরে দুদক এক নির্বাহী প্রকৌশলীকে ডেকেছে। সঙ্গে একই ডেস্কের কয়েকজনকে সাক্ষী হিসাবে ডেকেছে।

জানা গেছে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় পদোন্নতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্কতা অবলম্বন করছে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে সম্প্রতি পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে প্রথমে ৮ জনের নাম থাকলেও ৪ জনকে বাদ দেওয়া হয়। বাকি ৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে মামলা আছে কিনা তা জানতে দুদকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর ব্যাপারেও একই কারণে খোঁজ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। তবে সূত্র জানায়, ৪ জনের যে তালিকা করা হয়েছে সেখানে দুদকের মামলার এক আসামিও আছেন।

এছাড়া অনিয়মের অভিযোগে ইইডির কিছু বিষয়ে ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ আর সংস্কারের তালিকা তৈরির কাজ। এটি এখন থেকে মন্ত্রণালয় করবে। এছাড়া প্রধান প্রকৌশলীর কিছু বিষয়ের ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের মাঝে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির ‘দুর্নীতিবাজ’ প্রকৌশলীরা নির্দিষ্ট হারে ঠিকাদারদের কাছ থেকে যাতে অর্থ নিতে না পারেন সেই রাস্তাও খোঁজা হচ্ছে।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর