হবিগঞ্জ শহরে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং, চাহিদানুযায়ী মিলছে না সরবরাহ

admin
  • আপডেট টাইম : অক্টোবর ২২ ২০২২, ২১:২৮
  • 598 বার পঠিত
হবিগঞ্জ শহরে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং, চাহিদানুযায়ী মিলছে না সরবরাহ

আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ  \

হবিগঞ্জ শহরে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১২ ঘন্টাই থাকে না বিদ্যুৎ। কোন সময় ঘন্টায় একাধিকবার লোডশেডিং হচ্ছে। এতে একদিকে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন শহরবাসী। অন্যদিকে সীমাহীন লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন সাধারন মানুষ। তাছাড়া হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহে কারসাজি ও নিয়মবহির্ভূত ব্যবস্থাপনার অভিযোগ। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ দিনে ১২ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করছে। তাদের দাবী, চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ না থাকায় দৈনিক ৭ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের আওতায় পড়েছে হবিগঞ্জ শহর।
স্থানীয়রা জানায়, পিডিবি’র আওতাধিন হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘন্টা লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে। সরকারের ঘোষনাকে উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং না দিয়ে কারসাজি করছেন বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। এতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ঘন-ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে মানুষজন দিনের বেলা সঠিকভাবে কাজকর্ম করতে পারছেন না, আবার রাতের বেলা যে শান্তিতে ঘুমাবেন তারও উপায়ও নেই। বিদুৎ একবার গেলে আর আসে না। আবার এলেও কোন কোন সময় ঘন্টায় ৩-৪ বার লোডশেডিং হয়। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছেনুযায়ী লোডশেডিং দেয়ার কারনে ঠিকমত ব্যবসা-বানিজ্য করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ ঘন্টায় কয়েকবার লোডশেডিংয়ের কারনে ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া এইচএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত পড়াশুনা করতে পারছে না। অনেক সময় রাতের বেলা মোমবাতি জ্বালিয়ে তাদের লেখাপড়া করতে হচ্ছে। হাসপাতালসহ চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোতে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে প্রচন্ড গরমের কারনে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক মানুষ। হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমের কারনে দুই শিশু মারা গেছে বলেও রয়েছে অভিযোগ। হাসপাতালে লোডশেডিং দেখা দিলে গরমের অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন রোগি ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পুরাতন ভবনে জেনারেটর থাকলেও নতুন ভবনে এখনও জেনারেটর চালু হয়নি। যে কারণে লোডশেডিং দেখা দিলে বিকল্প কোনো উপায় থাকে না। ফলে রোগী ও তাদের স্বজনদের গরমে কষ্ট করতে হয়।
হবিগঞ্জ শহরের একাধিক গ্রাহক জানান, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৫ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও ১০-১২ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে দিন-রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১২ ঘন্টাই থাকছে না বিদ্যুৎ। তাছাড়া অফিস আদালতের কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটছে। সীমাহীন এ লোডশেডিংয়ের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ শহরের শিক্ষার্থীরা ঠিকমত পড়াশোনা করতে পারছেন না।
কিচেন টোয়েন্টিফোরের স্বত্ত¡াধিকারী প্রদীপ দাস জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে জিনিস পত্র নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ঘোষনা ছাড়া লোডশেডিং হওয়ায় ব্যবসা-বানিজ্য ও কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এ বিষয়ে কয়েকবার ফেসবুকে পোষ্ট করেছি। এতে কিছুই হচ্ছে না। ঘোষনানুযায়ী নির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং দেয়া হলে সুবিধানুযায়ী কাজ-কর্ম করা যেতো’।
বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম শিবলী খান বলেন, ‘সরকার যা বলছে, সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা পিডিবিকে শিডিউল দিয়েছি, কিন্তু তারা সেটা মানছে না। লোডশেডিংয়ে সীমা ছাড়িয়ে গেছে হবিগঞ্জের বিদ্যুৎ বিভাগ। রাতের বেলায় যে সময়ে বিদ্যুৎ থাকে, সেটা কাজে লাগে না। ঘোষনা দিয়ে নির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং দেয়া হলে ব্যবসা-বানিজ্য ও কাজ করতে সহজ হতো। বিদ্যুত আসার পর কাজের প্রস্তুতি নেয়া হলেই আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে কাজে ব্যাঘাত ও ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঘোষনা দিয়ে লোডশেডিং দিলে ভালো হবে। এতে ব্যবসা বানিজ্য করতে সহজ হবে। সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবী জানান তিনি।
নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হবিগঞ্জ শহরের ১৬ মেঘাওয়াট চাহিদা থাকলেও আমরা ৮ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। যে কারণে দৈনিক ৭ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের আওতায় পড়েছে হবিগঞ্জ শহর। তবে সাধারণ গ্রাহকের দাবী ১০ থেকে ১২ ঘন্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা সঠিক নয়, শহরে প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে ৭ ঘন্টাই লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে’।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর