সৌদিতে নির্যাতিত গৃহকর্মীর দেশে ফেরার আকুতি

admin
  • আপডেট টাইম : অক্টোবর ০৫ ২০২২, ২১:০৯
  • 586 বার পঠিত
সৌদিতে নির্যাতিত গৃহকর্মীর দেশে ফেরার আকুতি

আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ \

‘বাবা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমাকে উদ্ধার করো, দেশে নেয়ার ব্যবস্থা করো’। সৌদির রিয়াদে প্রবাসে থেকে তার পিতা কদ্দুছ মিয়ার ইমুতে ফোন করে কান্নাজিড়ত কণ্ঠে কথা গুলো বলছিলেন মাধবপুরের মেয়ে ইয়াসমিন বেগম (২০)। সে ইমুতে আরো জানায়, সৌদির রিয়াদে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ নির্যাতন তিনি সহ্য করতে পারছেন না। এদিকে, মেয়ের কান্নাজড়িত কন্ঠে কথা গুলো শুনার পর পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা। দুঃশ্চিন্তায় ভেঙ্গে পড়েন উপজেলার কদ্দুছ মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। এ বিষয়ে গত রবিবার ইয়াসমিন বেগমের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্র জানায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার কমলপুর গ্রামের কদ্দুছ মিয়ার মেয়ে ইয়াসমিন বেগমকে গৃহকর্মীর কাজ দিয়ে সৌদিতে পাঠায় ঢাকার আরামবাগ এলাকায় অবস্থিত শান ওভারসিস নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি। এর পর ইয়াসমিন সেখানে পৌছার পর থেকেই তার উপর অমানষিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ইয়াসমিন। সে কোনভাবেই তাদের নির্যাতন সহ্য করতে পারছে না। অবশেষে কয়েক দিন পূর্বে তার পিতার ইমুতে কল করে সে দেশে ফেরার আকুতি জানায়। এর পর মেয়ের কথা শুনার পর কদ্দুছ মিয়া দালাল চুনারুঘাট উপজেলার আমতলী এলাকার বাসিন্দা কাশেমের সাথে যোগাযোগ করেন। তবে কাশেম এখন বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে জানান কদ্দুছ মিয়া। তিনি জানান, কাশেমই ইয়াসমিনকে ঢাকার শান ওভারসিসের মাধ্যমে সৌদি পাঠিয়েছিলেন।
কদ্দুছ মিয়া বলেন, ‘তাঁর মেয়েকে রিয়াদের একটি নির্জন স্থানে আটকে রেখ শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। যে কাজের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই কাজ না দিয়ে নানা অবৈধ কাজে তাঁকে জড়িত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এখন দালাল কাশেম কোনো দায়িত্ব নিতে চান না। যে কারণে তাঁরা রোববার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন’।
মাধবপুর উপজেলার কমলপুর গ্রামের মুজাহিদ মসি নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ইয়াসমিন আমার গ্রামের বাসিন্দা। এ ঠিকানায় তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্তে¡ও দালালরা চুনারুঘাট উপজেলার একটি ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে সৌদিতে পাঠান। এ দালাল চক্র কী করে জাতীয় পরিচয়পত্র পাল্টিয়ে পাসপোর্ট করল, তা নিয়েই আমার প্রশ্ন’।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দালাল কাশেম মিয়া বলেন, ‘ঢাকার আরামবাগের শান ওভারসিস রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ইয়াসমিন বেগমকে গৃহকর্মীর কাজ দিয়ে সৌদিতে পাঠান কাশেম। সেখানে ইয়াসমিন ভালো আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো সঠিক নয়’।
ঢাকার শান ওভারসিসে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এ বি এম শামছুল আলমকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সুইটি আখতার বলেন, ‘দালালের মাধ্যমে আমরা ইয়াসমিনকে পেয়েছি। কাশেম নামের এক লোক তাঁকে নিয়ে আসেন আমাদের কাছে। ইয়াসমিন সৌদিতে যাওয়ার পরপই জানান, সেখানে তাঁর কাজ ভালো লাগে না। ওই মেয়ে নিজে থেকেই থাকতে চান না। তাঁর পরিবার চাইলে আমরা তাঁকে দেশে আনার চেষ্টা করব’।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্থানীয় দালাল কাশেমকে তার অফিসে ডেকে আনা হয়। কাশেম স্বীকার করেছেন, তার মাধ্যমে মেয়েটিকে সৌদিতে পাঠানোর কথা। তাই ওই ব্যক্তিকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় মেয়েটিকে সেখান থেকে ফেরত নিয়ে আসতে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা তাকে জানানো হয়েছে’।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর