ত্রিভূজ প্রেমের ফাঁদ, প্রেমিক-প্রেমিকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

admin
  • আপডেট টাইম : আগস্ট ৩১ ২০২২, ২০:৪৫
  • 614 বার পঠিত
ত্রিভূজ প্রেমের ফাঁদ, প্রেমিক-প্রেমিকার  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ \

হবিগঞ্জ শহরতলীর তেঘরিয়া গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র আকাশকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে হত্যার ঘটনায় দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড  দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুন্সী মশিয়ার রহমান এ রায় দেন। সে সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ছোট বহুলা গ্রামের জান্নাতী বেগম ওরফে শাবনুর এবং দক্ষিণ তেঘরিয়া এলাকার সিদ্দিক আলী।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘হত্যা মামলায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদÐ দেওয়া হয়েছে। অপর দুই আসামি সাবিনা ও সুমন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলায় দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদÐ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে শাবনুর, সাবিনা ও সুমন পরিকল্পিতভাবে সিদ্দিক আলীর নির্দেশে এই হত্যাকাÐ ঘটিয়েছে। ১৭ বছর বয়সী মাদ্রাসাছাত্র আকাশের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং এর এক পর্যায়ে তাকে রূপগঞ্জে ডেকে নিয়ে আসে তারা। সেখানে খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে খাইয়ে দেয় তাকে। এতে সে অজ্ঞান হয়ে পড়লে ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আসামিরা।’
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল তেঘরিয়া গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র আয়বুর রহমান খোকন ওরফে আকাশকে হবিগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরাত এলাকায় নিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা চার জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার আসামিরাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে বলা হয়, শাবনুরের সাথে ওই ছাত্রের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ সময় তারা ঘর বাঁধার আশায় কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থান করে। সেখানে বাসা ভাড়া নেয়। মাদ্রাসা ছাত্র আকাশ শাবনুরের সাথেও প্রেম করে আবার সাবিনার সাথেও সম্পর্ক চালিয়ে যায়। বিষয়টি আচঁ করতে পারে শাবনুর এবং সাবিনার প্রেমিক সুমন কাজে যায়। দুপুরে বাসায় এসে দেখে সাবিনা ও আকাশ আপত্তিকর অবস্থায়। এরপরের দিন শাবনুর ও সুমন মিলে আকাশকে হত্যা করে একটি জঙ্গলে ফেলে যায়। পরে রূপগঞ্জ পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করে।
এদিকে, আকাশের পিতা আব্দুল হাকিম তার ছেলে নিখোঁজ হয়েছে মর্মে হবিগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে যান। পুলিশ জিডি না করে তাকে বিভিন্নস্থানে খুঁজতে পরামর্শ দেন। হাকিম বারবার জানায়, ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরও সদর থানা পুলিশ জিডি নেয়নি। অবশেষে হাকিম থানায় বসে কাঁদতে থাকেন। এ সময় দুই সাংবাদিকের সাথে দেখা হয়। সাংবাদিকরা সাথে সাথে তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লার কাছে নিয়ে যান। তিনি বিষয়টি জেনে ডিবি’র ওসি আল আমিন ও মাহমুদুল হাসানকে নির্দেশ দেন। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ডিবি পুলিশ শাবনুর ও সাবিনাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। পরে রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে আটক দুইবোনকে নিয়ে যায়। তাদের স্বীকারোক্তি মতে সুমন ও সিদ্দিক আলী আটক করা হয়। পরে হাকিম বাদি হয়ে উল্লেখিতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর