মানব দেহ কুরুক্ষেত্র

admin
  • আপডেট টাইম : আগস্ট ৩০ ২০২২, ০৯:৫৬
  • 661 বার পঠিত
মানব দেহ কুরুক্ষেত্র

-গৌর প্রসাদ রায়-
কুরুক্ষেত্র কিসের ক্ষেত্র ? কুরু-কর্ম, ক্ষেত্র-ভূমি। কর্মভূমি বলেই কুরুক্ষেত্র কেননা দেহে পাঁচটি কর্মন্দ্রিয় আছে। যথা বাক-বাক্য। পানি-হস্ত। পাদ-পদ বায়ূ-গুহ্য। উপন্থ-লিঙ্গ। এই পাঁচটি কর্মন্দ্রিয়+পাঁচটি, জ্ঞানন্দ্রিয় মিলে চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহŸা, ত্বক, এই পাঁচটি কর্মন্দ্রিয় +পাঁচটি, জ্ঞানন্দ্রিয় মিলে দশটি কেননা, পূর্ব-পশ্চিম আদি দশদিকে ভ্রমনশীল বলে একটা ইন্দ্রিয় দশগুন বিশিষ্ট। অতএব দশ গুন দশ একশত ইন্দ্রিয়গণ।
অন্ধমন ধৃত রাষ্ট্রের পুত্রগণ এই গেল মামকা। পাÐুবাচৈব-পÐু পুত্রগন, যুধীষ্টির, ভীম, অর্জ্জুন, নকুল, সহদেব, এরা পাঁচ ভাই পঞ্চ পান্ডব। দেহ জগতে ক্ষিতি,অপ, তেজ, মরুতবোম, পঞ্চ পান্ডব।
১। ক্ষিতি-দেহের মেদমাংশ ইনি সহদেব। পাঁচ ভাইয়ের পাঁচটি গোপন বাসস্থান আছে। সহদেবের গোপন বাসস্থান দেহের ত্যাজ্য মাটি বা মল গুলি যেখানে গিয়া জমা হয় অর্থ্যাৎ মলের ভান্ড। সাধুরা তাকে মলাধার চক্র বলে, এখানে নাকি চারটি পদ্ম আছে। কুল-কুÐলিনী বলাকার অর্থ্যাৎ সর্পকারে আড়াই পেছ হয়ে নিদ্রিত আছে। সাধকরা সাধনায় যখন কুন্ডুকে টান দেয় ওটা তখন সর্পের মতন ফনা তুলে ফুটস্থের সঙ্গে সিস ধরে। এটাই সহদেবের বাসস্থান।
২। অপতত্ত¡-নকুল। ন-কুল, নকুল। যাহার কুল কিনারা নাই। জলেরই কুল কিনারা নাই। দেহের রক্ত জলই নকুল। তাহার বাসস্থান দেহের ত্যাজ্য জলন্ডিপ সেখানে জমা হয়। অর্থ্যাৎ প্রশ্রাবের ভান্ড। এটাকে সাধুরা স্বাধিস্টন চক্র বলে এখানে নাকি ছয়টি পদ্ম আছে। সাধানার প্রথম স্থান বলে এটাকে নকুলের বাসস্থান।
৩। তেজতত্ত¡ -অর্জ্জুন। মানবের সর্ব দেহে তেজ আছে। দেহের সমস্ত তেজ একত্র হয়ে যেখানে গিয়ে খাদ্য -দ্রব্যাদি পরিপাক হয়। অর্থ্যাৎ জঠরাগ্নি এটাকে সাধুরা বলছে মনিপুর চক্র। এখানে নাকি দশটি চক্র আছে। দশমদল বলে। এটাই অর্জ্জুননের বাসস্থান।
৪। মরুততত্ত¡-ভীম। বাসতাতত্ত¡ ভীম পবন পুত্র। বায়ু সর্বদেহে আছে। কিন্তু যেখানে গিয়া বায়ুর কম্পন হয় অর্থ্যাৎ বক্ষস্থান। সাধুরা তাকে অনাহত চক্র বলে। এখানে চারটি পদ্ম আছে, এটাই ভীমের বাসস্থান।
৫। বোমতত্ত¡-আকাশতত্ত¡। আকাশে শব্দ আছে। মানবের শব্দ কন্ঠেই আছে। এটাই যুধিষ্টির বাসস্থান। সাধুরা বিশুন্ধাক্ষ্য চক্র বলে। এখানে নাকি ষোলটি পদ্ম আছে। মুলাধার, স্যধিষ্টান, মনিপুর, অনাহত এবং বিশুন্ধাক্ষ্য মানব দেহের এই পাঁচটি স্থানই পঞ্চ পাÐব। পঞ্চ তত্ত¡ই পাÐব।
কিং কুর্ব্বত সঞ্চয় ঃ
হে সঞ্চয় যুদ্ধস্থলে সৈন্যগণদের নিয়া আমার পুত্রগণ আর পাÐুপুত্রগণ কি করেছে? তদোত্তরে সঞ্চয় গীতার বানীর মাধ্যমে যুদ্ধের সংবাদ সবই বলে গেল। এখন কোথায় যুদ্ধ? ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্র এটা বাহির জগতের কথা কিন্তু অন্তর জগতের যুদ্ধক্ষেত্রে দেহক্ষেত্র ও মানক্ষেত্র । দুই পক্ষের যুদ্ধ চলছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ মাত্র আঠার দিন হয়েছিল। অন্তর জগতের দেহেক্ষেত্রে আর মনক্ষেত্রে যে যুদ্ধ হচ্ছে তার কোন বিরাম নাই। দিবা-রাত্র, সকাল-সন্ধ্যা অনবরতই চলছে। পাঞ্চ পান্ডব অর্থ্যাৎ পঞ্চ তত্ত¡ চায় আত্মরাজ্য স্থাপন করিতে পূজা পার্বন মাগযজ্ঞ, জল-তপ ধ্যান ধারনা, সাধণ ভজন যাবতীয় ভগবৎ ক্রিয়া কার্যাদি করিতে।
আর কুরুগণ অর্থ্যাৎ ইন্দ্রিয়গন চায় মনরাজ্য পালন করিতে কিসের ধর্ম, কিসের পূণ্য, ভগবান আবার কে? অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার কুর্তক নিয়ে দেহ-ক্ষেত্রে মন ক্ষেত্রে যুদ্ধ অবিরতই চলছে।
সুধীগন আমার অনধিকারস্বর্চ্চার দোষ ত্রæটি মার্জ্জনা করিবেন, আগামীতে আপনাদের সহযোগিতা পাইলে আরও লিখার ইচ্ছে আছে।
লেখক-
গৌর প্রসাদ রায় (বীর মুক্তিযোদ্ধা)
সভাপতি-সেক্টর কমান্ডার ফোরাম, হবিগঞ্জ জেলা শাখা ও সাবেক ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার, হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর