মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা -শ্রমিকদের আন্দোলন

admin
  • আপডেট টাইম : আগস্ট ১৩ ২০২২, ২২:২৪
  • 605 বার পঠিত
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে  চা -শ্রমিকদের আন্দোলন

আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ  \

হবিগঞ্জে  চা-শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে চার দিনব্যাপী দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে শ্রমিকেরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় গতকাল শনিবার থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন তাঁরা।
সকাল ১০টা থেকে হবিগঞ্জের ২৪টি বাগানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন শ্রমিকেরা। বেলা ১২টার দিকে জেলার চুনারুঘাটে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের চান্দপুর এলাকায় অবস্থান করেন শত শত চা-শ্রমিক। সেখানে ২৪টি বাগানের শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা দেড়টার মধ্যে সেখানে অন্তত ৮ হাজার শ্রমিক সমবেত হন। পরে তারা রওনা হন উপজেলা শহরের উদ্দেশ্যে।
৫ কিলোমিটার পায়ে হেটে শ্রমিকরা শহরে প্রবেশ করতে চাইলে চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসনের সামনে পুলিশের বাধার শিকার হন তারা। এ সময় পুলিশ ব্যারিকেট তৈরি করে শ্রমিকদের ঢুকতে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের ধাক্কা ধাক্কি হয়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে শহরে প্রবেশ করে চুনারুঘাট থানা গেটের সামনে প্রধান সড়কে অবস্থান নেয়। পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্করসহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জনপ্রতিনিধিরা শ্রমিকদের সাথে একাত্বতা পোষণ করলে তারা কর্মসুচি স্থগিত করে ফিরে যায়। তবে আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবার তারা নিজ নিজ বাগানে অবস্থান নেবেন। মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করার কর্মসুচি ঘোষণা করেন শ্রমিক নেতারা।
চা-শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা জানান, প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে। অথচ বাংলাদেশের চা-শ্রমিকেরা ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন। দুই বছর পর পর শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ নেতৃবৃন্দের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়। কিন্তু বিগত চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এরপর ১৯ মাস কেটে গেলেও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেনি।
নতুন চুক্তি না হওয়ার কারণে শ্রমিকদের বেতনও বাড়ছে না। জুনে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ চা সংসদ নেতৃবৃন্দের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। পরে চা সংসদ নেতৃবৃন্দ মজুরি ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা করার প্রস্থাব দেন। তবে তা সন্তোষজনক না হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন শ্রমিক নেতারা।
এরপর এক মাস অতিবাহিত হলেও মালিকপক্ষ আর কোনো সিদ্ধান্ত না জানানোর কারণে গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা চার দিন প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকেরা। এতেও মালিক পক্ষের সাড়া না পেয়ে গতকাল সকাল থেকে পূর্ণদিবস কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকেরা।
চান্দপুর বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সাধন সাঁওতাল বলেন, ‘বাংলাদেশে চা-শ্রমিকদের একটা বিশাল অংশ রয়েছে। এ দেশের ভোটার হয়েও তাঁরা অবহেলিত। মৌলিক অধিকারও তাঁদের ভাগ্যে জোটে না। এ ছাড়া রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ১২০ টাকা মজুরি পান। এভাবে আর আমরা চলতে পারছি না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেন পাল বলেন, ‘মালিক-শ্রমিকের মধ্যে চুক্তির ১৯ মাস অতিবাহিত হলেও তারা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায়নি। এখন বলছে তারা ১৪ টাকা মজুরি বাড়াবে। তাই আমরা শ্রমিকদের স্বার্থে এই কর্মসূচি পালন করছি।’
সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা কোনো অশান্তি চাই না। আমরা আমাদের অধিকার চাই। সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে আমাদের শ্রমিকেরা আর টিকে থাকতে পারছেন না। তাই যত দ্রæত সম্ভব শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করে তাদের কাজে ফিরিয়ে নিতে মালিকপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর