হবিগঞ্জে জেলা প্রশাসকের তৎপরতায় আত্মসাতের টাকা ফেরত দিল দালাল চক্র

admin
  • আপডেট টাইম : আগস্ট ০৪ ২০২২, ২১:১৩
  • 612 বার পঠিত
হবিগঞ্জে জেলা প্রশাসকের তৎপরতায় আত্মসাতের টাকা ফেরত দিল দালাল চক্র

আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ \

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের ব্যাপক তৎপরতায় শায়েস্তাগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ৪ পরিবারের সদস্যদের সরকারী অনুদানের আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে আত্মসাতের ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে অভিযুক্ত বিভিন্ন এলাকার ৬ দালাল। শুধু তাই নয়, এ সময় অভিযুক্ত দালালদের পক্ষে নুরুল আমিন ভবিষ্যতে এমন ধরনের অপরাধে জড়াবে না বলে স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যায়ন পত্র দিয়ে মুক্তি লাভ করে।
এদিকে, ওই দিন দুপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ৪ পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার হওয়া টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। দীর্ঘদিন পর অনুদানের টাকা ফেরত পেয়ে দরিদ্র ৪ পরিবার সদস্যরা সরকার ও জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এর আগে গত ৬ জুলাই সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত রাহেলা খাতুনের মা মিনারা খাতুন ও আব্দুর রাহিম রাজ নামে দুই ভুক্তভোগি জেলা প্রশাসকের কাছে আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধার ও দালালদের শাস্তির দাবী জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
জানা যায়, গত বছরের ২১ আগষ্ট সকালে শায়েস্তাগঞ্জের নছরতপুরে ট্রাক ও সিএনজি অটোরিক্সা মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ শ্রমিক নিহত হন। বিষয়টি হবিগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষনিক জেলা প্রশাসক নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল অনুদান দেন এবং বিনা ময়নাতদন্তে নিহতের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। এরপর শ্রম মন্ত্রনালয় থেকে জেলা প্রশাসক নিহতদের পরিবারকে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা করে সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা করেন। পরে তাদের নামে বরাদ্দকৃত ওই টাকার চেক মৌলভী বাজারের শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদপ্তর থেকে ইস্যু করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে চুনারুঘাটের দালাল চক্রের মূল হোতা মোঃ আব্দুল্লাহর সহযোগিতায় তার আত্মীয় রমজান মিয়া, নুরুল আমিন ও ফারুক মিয়া ওই চেক ইসলামী ব্যাংক নোয়াপাড়া শাখায় জমা করে। এ সময় তারা জন প্রতি ২ লাখ করে ৬ লাখ টাকা টাকা উত্তোলন করে নিহতদের ৬ পরিবারের মধ্যে উপজেলার শ্রী বাউর গ্রামের রাহেলা খাতুনের মা মোছাঃ মিনারা খাতুনসহ ৪ জনকে ৫০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা করে বুঝিয়ে দিয়ে বাকি টাকা হরিলুট করে। তাৎক্ষনিক ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনকে অবগত করলে তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান। পরে জেলা প্রশাসক তাৎক্ষনিক ওই টাকা উদ্ধারে শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে তৎপর কার্যক্রম গ্রহন করেন। বিষয়টি জানতে পেরে নড়ে-ছড়ে বসে ওই দালাল সিন্ডিকেট চক্রটি। তারা তড়ি-ঘড়ি করে চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহেরের মাধ্যমে সমঝোতা বৈঠক করে ভুক্তভোগি মিনারা খাতুনসহ নিহতদের ৪ পরিবারকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে বুঝিয়ে দেয়।
অন্যদিকে মোঃ আব্দুর রহিম রাজ নামে অপর ভূক্তভোগি জালাল উদ্দিনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করলে তার পিতা ২ লাখ টাকা বুঝে পান। তবে সে দালালদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সিন্ডিকেট চক্রের মূল হোতা আব্দুল্লাহ তাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে এবং বিভিন্ন ভাবে ক্ষয়-ক্ষতি ও হত্যার হুমকি দেয়। যে কারনে ভূক্তভোগি মিনারা খাতুন ও আব্দুর রাহিম রাজ জেলা প্রশাসকের কাছে আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধার ও দালালদের আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় শাস্তির দাবী জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর আত্মসাতকৃত ওই টাকা উদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা চালান জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। তিনি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শোয়েব শাত-ঈল-ইভান প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে অভিযুক্ত চুনারুঘাট উপজেলার আমকান্দি গ্রামের রওশান আলীর ছেলে ফারুক মিয়া, তেলিউকতা গ্রামের মন্তাজ উল্লাহর ছেলে রমজান আলী, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার কাটাখালি গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে নুরুল আমিন, উত্তর ফান্দ্রাইল গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ, মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের শৈলেন পালের ছেলে বিশ্বজিৎ পাল ও ইসলামী ব্যাংক নোয়াপাড়া শাখার ম্যানেজার মোঃ জাকারিয়াকে নোটিশ প্রদান করা হলে তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পরপর ৩ বার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এতে শুনানী ও তদন্তে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া যায়। গতকাল সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে রায় ঘোষনা করা হলে অভিযুক্ত দালালরা দায় স্বীকার করে এবং আত্মসাতকৃত ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শোয়েব শাত-ঈল-ইভানের হাতে দিয়ে একটি প্রত্যয়ন পত্র দেয়। পরে দুপুরে জেলা প্রশাসক নিহত রাহেলা খাতুনের মা মোছাঃ মিনারা খাতুনকে ৫০ হাজার, আলাউদ্দিনের স্ত্রী মোছাঃ লাইজু আক্তারকে ৮৫ হাজার, আব্দুল আহাদের পিতা মোঃ আবুল হোসেনকে ১ লাখ ও সোহাগ মিয়ার পিতা মোঃ আব্দুল্লাহকে ১ লাখ বুঝিয়ে দেন। এতে তারা ওই টাকা বুঝে পেয়ে খুবই আনন্দিত হন এবং সরকার ও জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাবিদ সারওয়ার জানান, শায়েস্তাগঞ্জের নছরতপুরে ট্রাক-সিএনজি দূর্ঘটনায় ৭ জন শ্রমিক মারা যান। পরে তাদের মধ্যে ৫ জনের পরিবার শ্রম অধিদপ্তরে অনুদানের জন্য আবেদন করেন। শ্রম অধিদপ্তর হতে নিহত প্রত্যেকের পরিবারের নামে দুই লক্ষ টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়। কিন্তু চুনারুঘাট উপজেলার একদল দালাল দরখাস্ত করা, অফিস খরচসহ ইত্যাদির নামে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার প্রতি ৫০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাত করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে সম্প্রতি মিনারা খাতুন ও আব্দুর রহিম রাজ নামে দুই ভোক্তভূগী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধার করে ভুক্তভোগি ৪ পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
ভোক্তভূগী আব্দুর রহিম রাজ জানান, আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত পেয়ে তারা খুবই খুশি। আর এ জন্য তারা জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বজনরা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। এতে আমরা মর্মাহত কিন্তু চক্রটি আমাদের ভূল বুঝিয়ে টাকাগুলো আত্মসাত করতে চেয়েছিল। দালালদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব’।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর