হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রীকে শাস্তি দেয়ায় শিক্ষিকা বরখাস্ত

admin
  • আপডেট টাইম : আগস্ট ০১ ২০২২, ২১:০৯
  • 649 বার পঠিত
হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রীকে শাস্তি দেয়ায় শিক্ষিকা বরখাস্ত

আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ \

হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে শাস্তির ঘটনায় তাৎক্ষনিক প্রদক্ষেপ গ্রহন করেছে জেলা প্রশাসন। ওই ছাত্রীকে অমানবিক শাস্তির বিষয়টি তদন্তে সতত্যা পাওয়ায় শিক্ষিকা মৌসুমী রায়কে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে তদন্ত কমিটি ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে, ওই শিক্ষিকার শাস্তির দাবীতে আন্দোলন করেছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে জেলার বিভিন্ন এলাকার উলামা কেরাম ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে জরুরী সভা করেছে জেলা প্রশাসন। এতে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না
হয়, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহŸান জানানো হয়েছে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার শহরের মাহমুদাবাদ এলাকার বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আক্তার নির্দিষ্ট স্কুল ড্রেস ছাড়া শ্রেণীকক্ষে আসে। এ সময় বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন সহকারী শিক্ষিকা মৌসুমী রায় তাকে অমানবিক শাস্তি প্রদান করেন। বিষয়টি ওই ছাত্রীর পরিবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া খানমকে লিখিত ভাবে অবগত করেন। এ প্রেক্ষিতে শনিবার সভাকক্ষে বসেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষক মৌসুমী রায়কে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে গত রবিবার দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারে সংবাদ প্রকাশ করা হলে নজরে আসে জেলা প্রশাসনের। ফলে ওই দিন বিকেলে তাৎক্ষনিক সভায় বসেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষক মৌসুমী রায়কে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষানুরাগী সদস্য একেএম আজিজুর রহমানকে আহবায়ক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং সিনিয়র শিক্ষক সরোয়ার আলমকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর বিষয়টি জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ওই শিক্ষিকার শাস্তির দাবী জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল করেন অনেকেই। গতকাল সোমবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ের গেইটের সামনে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়–য়া উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ওই শিক্ষিকার গ্রেফতারপুর্বক শাস্তির দাবী জানিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এদিকে, উত্যপ্ত পরিস্থিস্থিতে তাৎক্ষনিক প্রদক্ষেপ গ্রহন করে জেলা প্রশাসন। বিক্ষোভের পরপরই জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, এনএসআই আজমূল হোসেনসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাসহ অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্রীদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। তাছাড়া বিকেলে জেলা প্রশাসন সভাকক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে এক জরুরী মতবিনিময় সভা করেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। সভায় ভবিষ্যতে যাতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক করা হয়।
এর আগে দুপুরে জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে সম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখতে জেলার উলামা কেরামের সাথে জরুরী সভা করেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উলামা কেরামগন শিক্ষিকা মৌসুমী রায়কে গ্রেফতার ও শাস্তি দাবী করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন এবং সকলকে ধৈর্য্য ধারন করে সহনশীল আচরণ করার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি এ বিষয়ে জনসাধারণকে শান্তিপূর্ণ রাখতে তাদের আহŸান জানান জেলা প্রশাসক।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর