আখলাছ আহমেদ প্রিয় \
প্রচন্ড গরমে দেহ-মনে শান্তির পরশ বোলানো বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে এখন হবিগঞ্জ জেলা থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। আবহমানকালের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে হাতপাখা। বিশেষ করে জেলা জুড়ে পাওয়া যেতো তালের পাখা। চৈত্র-বৈশাখ মাসে তীব্র দাবদাহ শুরু হলেই মনে পড়তো তালের পাখার। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে গরমকাল আসা মানেই হাতপাখার কদর বেড়ে যাওয়া। এটা যেন গরমের দিনের পরম বন্ধু। তবে হবিগঞ্জে হারিয়ে যেতে বসেছে এই হাতপাখা। হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের সামনে হাতপাখা বিক্রেতা সিমা আক্তার বলেন, ২ বছর আগেও তিনি প্রতিদিন গড়ে ৩০-৫০টি হাতপাখা বিক্রি করতেন। গরম কালে যা বেচাকেনা করতেন তা দিয়ে সারাবছর ভালোই চলত। কিন্তু বর্তমানে হাতপাখার দাম বৃদ্ধি পেলে বেচাবিক্রি কমে গেছে। এখন এমন দিনও আছে যেদিন একটি পাখাও বিক্রি হয় না। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন জানান, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎখাতকে সরকার গুরুত্ব দেয়ায় অনেকেই হাতপাখা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। কয়েকদিন ধরে জেলা জুড়ে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। পাশাপাশি ভ্যপসা গরম ও প্রচÐ রুদ্রতাপ দেখা দিয়েছে। এতে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না কোন ধরনের হাতপাখা।
হাতপাখার কারিগর শরীফপুর গ্রামের সিদ্দিক আলী বলেন, আগের মত হাতপাখা বিক্রি হয় না। সারাদিনে ১০টা পাখাও বিক্রি করা যায়না। তাছাড়া ‘কাঁচামাল সঙ্কট ও মুনাফা কম হওয়ায় এই পেশাও পাল্টে ফেলছেন তালপাখার কারিগররা। যারা এখনো এ পেশায় আছেন তাদের অবস্থা ভালো নয়।
ইদানীং প্লাস্টিক ও বৈদ্যুতিক পাখা, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি আধুনিক সামগ্রীর একচ্ছত্র বাজারে তালপাখা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। তবে যতই আধুনিক সামগ্রী সহজলভ্য হোক না কেন, তালপাখার শীতল পরশ আর কিছুতে পাওয়া যায় না।’ গ্রামের রাস্তাঘাটে অনেক মানুষ হাতপাখা নিয়ে বসে থাকতো। এখন আর সে দৃশ্য দেখা যায় না।