হবিগঞ্জে পানিবন্দি সাড়ে ৫শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান \ শিক্ষার মান অনিশ্চিত

admin
  • আপডেট টাইম : জুলাই ০৫ ২০২২, ২১:০৭
  • 592 বার পঠিত
হবিগঞ্জে পানিবন্দি সাড়ে ৫শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান \ শিক্ষার মান অনিশ্চিত

আখলাছ আহমেদ প্রিয় \
হবিগঞ্জ জেলায় চলমান বন্যায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে ১২টি কলেজসহ সাড়ে ৫শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৯টি কলেজসহ ৪শ ৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া জেলার ১ হাজার ৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ঈদ ও গীষ্মকালীন ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ এবং অগ্রিম ঈদ ও গীষ্মকালীন ছুটি থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার মানোন্নয়ন। ফলে শিক্ষার্থীদের আশানুস্বরূপ ফলাফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কারনে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবক।
এদিকে, অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো এখনো পাঠদানের উপযোগী হয়নি। তাছাড়া বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় বন্যার পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে শতাধিক শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাব পত্রের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৫২টি। চলতি বন্যায় ৭টি উপজেলায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে ৪শ ৫৪টি বিদ্যালয়। এর মধ্যে নবীগঞ্জে ১০৮, বানিয়াচংয়ে ১৬৬, মাধবপুরে ৫৪, লাখাইয়ে ৪৫, আজমিরীগঞ্জে ৫৮, বাহুবলে ৯ ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৪টি বিদ্যালয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৭টি উপজেলায় প্রায় শতাধিক বিদ্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাব পত্রের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া জেলার ৩শ ৪৩টি বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কারনে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে গত ২৮ জুন জেলার ১ হাজার ৫২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অগ্রিম ঈদ ও গীষ্মকালীন ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই বিদ্যালয় গুলো খোলা হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলায় ২৭৮টি নি¤œ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় কবলিত হয়েছে ৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত জেলায় বন্যাদূর্গত মানুষের জন্য ১১০টি প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষনা করা হয়েছে। জেলার বানিয়াচংয়ে ৪০, নবীগঞ্জে ২০, লাখাইয়ে ১২, আজমিরীগঞ্জে ১১, মাধবপুরে ৩ ও হবিগঞ্জ সদরে ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি রয়েছে। তাছাড়া ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পানিবন্দি রয়েছে ১২টি কলেজ। এগুলো হল, আজমিরীগঞ্জ মহা বিদ্যালয়, পাহাড়পুর আদর্শ কলেজ, জনাব আলী ডিগ্রী কলেজ, বানিয়াচং আইডিয়াল কলেজ, নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, ইনাতগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, র্কীতি নারায়ন কলেজ, দিনারপুর কলেজ, আবু জাহির মডেল কলেজ, কবির কলেজিয়েট একাডেমী, আলেয়া জাহির কলেজ ও হাজী চেরাগ আলী কলেজ। এর মধ্যে আজমিরীগঞ্জ মহা বিদ্যালয়, পাহাড়পুর আদর্শ কলেজ, জনাব আলী ডিগ্রী কলেজ, বানিয়াচং আইডিয়াল কলেজ, নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, ইনাতগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, র্কীতি নারায়ন কলেজ, দিনারপুর কলেজ ও লাখাই মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রী কলেজ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬টি উপজেলায় ১০/১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসবাব পত্রের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস। তবে পানি না কমায় চুড়ান্ত ক্ষতি পরিমান নির্ধারণ করা হয়নি।
এদিকে, জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বন্যা কবলিত ৫শ ৪৯টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার মানোন্নয়নে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া অগ্রিম ঈদ ও গীষ্মকালীন ছুটি দেয়ায় শিক্ষার্থীদের আশানুস্বরূপ ফলাফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যে কারনে শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফল নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক।
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ তৌফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় ৭টি উপজেলায় ৪শ ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ৩শ ৪৩টি বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষনা করা হয়েছে। বন্যার পানিতে প্রায় শতাধিক বিদ্যালয়ের আসবাব পত্রের ক্ষতি হয়েছে। চুড়ান্ত ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়নি। পানি নামলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। তাছাড়া গত ২৮ জুন জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ঈদও গীষ্মকালীন ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। আগামী ১৭ জুলাই ছুটি শেষ হবে। এর মধ্যে পানি কমলে বিদ্যালয় গুলোতে পাঠদান শুরু করা হবে। তবে পানি না কমলে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা নিয়ে সংশয় দেখা দিবে বলে তিনি জানান।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ বলেন, ‘জেলার ৬টি উপজেলায় ৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় কবলিত হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি কলেজ পানিবন্দি রয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ১০/১২টি বিদ্যালয়ের বেঞ্চসহ আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া বন্যাদূর্গত মানুষের জন্য ১১০টি প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক উপজেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যার পানি স্বাভাবিক হলেই সরকারী নিয়মানুযায়ী যথারীতি পাঠদান শুরু করা হবে’।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর