তফসিল ঘোষণার পর বিয়ানীবাজারে জমজমাট পৌর নির্বাচনের মাঠ

admin
  • আপডেট টাইম : এপ্রিল ২৬ ২০২২, ২০:১৭
  • 725 বার পঠিত
তফসিল ঘোষণার পর বিয়ানীবাজারে জমজমাট পৌর নির্বাচনের মাঠ

মিসবাহ উদ্দিনঃ
এবার ঈদের মাঠে ভোটের হাওয়া বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনের। এবার সুসময়। তাই ঈদকে সামনে রেখে অতীতের শূন্যতা পূর্ণতায় রূপ দিতে মহাটার্গেট রাজনীতিবিদদের। প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরসহ সব দলেই প্রকাশ্য ও গোপনে চলছে প্রস্তুতি। আগামী পৌরসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রকে আকৃষ্ট করতে নিজেদের অবস্থান অনেকেই জানান দিচ্ছেন। আগ থেকেই নিজ গ্রামের আনাচে-কানাচে ছুটে চলছেন।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৫ জুন এ পৌরসভার ভোট গ্রহণ অনুষ্টিত হবে।
ইতিমধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে
নির্বাচনের সুরধ্বনি বেজে উঠতেই সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা পুরোদমে নেমে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোর গাছে, বাশে ও বিভিন্ন স্থাপনায় দীর্ঘদিন থেকে ঝুলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রার্থীতার জানান দেয়া ব্যানার-ফেস্টুন। শ্রদ্ধা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সামাজিব চলছে পাল্লা দিয়ে প্রার্থীদের প্রচারনা। সামাজিক, রাজনৈতিক, ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষনীয় বিয়ানীবাজারে চায়ের টেবিল ও বিভিন্ন আড্ডায় এখন আর পৌরসভা নির্বাচনের আলোচনাই প্রবাসী অধুষ্যিত বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র বিয়ানীনীবাজার পৌরশহর তথ্য পৌরসভা। ২০০১ সালে তৎকালিন সদর ইউনিয়ন থেকে পৌরসভায় উত্তীর্ণ হয় এই জনপদ। অতপর দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর বিভিন্ন মামলা জনিত কারনে পৌর প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় এই পৌরসভা। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় এই | পৌরসভার নির্বাচন। একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় স্থগিত করা হয় ঐ কেন্দ্রের নির্বাচন, অতঃপর ৮ মে ২০১৭ইং তারিখে স্থগিত কেন্দ্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ আব্দুস শুকুর মেয়র পদে বিজয়ী হন। ঐ বছর ২২ মে শপথ গ্রহণ করে নির্বাচিত পৌর পরিষদ এবং ২৩ মে দায়িত্ব গ্রহণ করে। তাই আগামী ১৫জুন বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে এ নিয়ে কোন সংশয় নেই। তাই বিয়ানীবাজারে এখন পুরোদমে বইছে আসন্ন পৌর নির্বাচনী হাওয়া। দীর্ঘদিন থেকে মাঠে থাকা সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নেমে শুরু করে দিয়েছেন জোর তৎপরতা। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে প্রায় হাফ ডজন প্রার্থী বিভিন্ন মাধ্যমে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তন্মধ্যে ৪ জন উল্লেখ্যযোগ্য প্রার্থী ইতিমধ্যে দেশে এসে পুরোদমে প্রচার-প্রচারনা, লবিং, তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীই বেশী। তারা ভোটারদের পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন লাভের পাশাপাশি জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদের মধ্যে ২জন দলীয় মনোনয়ন না পেলেও এবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণাও দিচ্ছেন। ফলে এবার পৌর নির্বাচনে জমজমাট ভোটের লড়াইয়ের সম্ভাবনায় পৌরবাসী তথা উপজেলার সচেতন মহল আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বেশ
কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন।

জানা গেছে, বর্তমান পৌর মেয়র মোঃ আব্দুস শুকুর এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী মেয়র আব্দুস শুকুর বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের আস্থাভাজন হিসেবে গত ৫বছরের পরীক্ষায় তিনি লেটারমার্কসসহ উত্তীর্ণ। তাছাড়া মেয়র পদের দায়িত্ব পালনে তার আত্মরিক প্রয়াস, বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় সর্বমহলে প্রশংসতি মেয়রের ভূমিকা দলীয় মনোনয়ন তথা আসন্ন নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এবার তিনি

অন্যদের চেয়ে এগিয়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার মেয়র পদে নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাজী আব্দুল হাছিব মনিয়া। বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ শেষ বয়সে এসে জনপ্রতিনিধি হয়ে পৌরবাসীর সেবা করতে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান কার্যকরী কমিটির সদস্য শহীদ পরিবারের সন্তান মো.ময়নুল হোসেন এবার দলীয় প্রতীকের নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামীলীগ পদে নির্বাচন করতে আমেরিকার উন্নত জীবনের মায়া ছেড়ে দীর্ঘদিন থেকে দেশে এসে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্রনেতা ফারুকুল হক, বিয়ানীবাজার উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, পৌরসভা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ছাত্রলীগের সাবেক তুখড় নেতা (কানাডা প্রবাসী) আহবাবুর রহমান সাজু। শিহাব উদ্দিন, এছাড়া আরোও অনেকে নৌকার মনোনয়ন চাইলে উপরোক্ত প্রার্থীরাই রয়েছেন প্রধান সারিতে। তারা সকলেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে পূর্ণ আশাবাদি। এজন্য দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে হাইকমান্ড পর্যন্ত নানা ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন তারা। শেষ পর্যন্ত কে পাবেন নৌকার মনোনয়ন তা সময়ই বলে দেবে। মেয়র পদে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগ ছাড়াও তৎপরতা চালাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সিপিবি ও স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থী। অন্যান্য দলের প্রার্থীরা নির্বাচন করলে দলীয় প্রতীকেই করবেন, তবে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী
হয়েই নির্বাচন করবেন। জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে মাঠে রয়েছেন প্রভাষক আব্দুস সামাদ আজাদ। তবে সম্প্রতি জামাতের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আব্দুস সবুর এর নামও আসছে। শেষ পর্যায়ে এই দুজনের মধ্যে যেই নির্বাচন করেন না কেন ভোটের লড়াইয়ে শক্ত প্রার্থী হিসেবেই অবতীর্ণ হবেন এবারের নির্বাচনী প্রেক্ষাপট তাই বলছে।

এদিকে মেয়র পদে এবারও প্রার্থী হতে মাঠে রয়েছেন। সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন। তিনি বিগত নির্বাচনের পর থেকেই ভোটারও সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। বর্তমানে তিনি ও শারীরিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ্য বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যায়ে যদি তিনি নির্বাচন করেন তবে ভোটের মাঠের এই পাক্কা খেলোয়াড় যে মূল লড়াইয়ে থাকবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফতেহপুর গ্রামের আরেক প্রবাসী প্রার্থী অজি উদ্দিন মেয়র পদে নির্বাচন করতে দীর্ঘদিন থেকে প্রবাসী জীবন ছেড়ে দেশে এসে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। ছুটে যাচ্ছেন মানুষের সুখে দুঃখে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করলে তিনিও শক্ত প্রার্থী হিসেবে আভির্ভূত হতে পারেন। গত নির্বাচনে ই বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নির্বাচন করে ২য় স্থান অর্জন করেছিলেন তৎকালিন । পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নাসের পিন্টু। এবার বিএনপি দলগত ভাবে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তিনি নেই নির্বাচনী মাঠে। এছাড়া মেয়র পদে ও বিএনপির অন্য কোন প্রার্থীকেও নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে না। বাংলােদশের কমিউনিস্ট পার্টি এবার মেয়র পদে প্রার্থী দিতে পারে। কমিউনিস্ট পার্টি বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট আবুল কাশেমের নাম আলোচনায় রয়েছে। এদিকে ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী ও সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলরের ৩টি ওয়ার্ডে ১ ডজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তারা ব্যানার, ফেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি ন ছুটছেন পাড়া মহল্লার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের বাড়ি বাড়ি। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে। সব মিলিয়ে বিয়ানীবাজার পৌরসভা জুড়ে এখন নির্বাচনী আমেজ বিরাজমান।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর