নারী দিবস: বিয়ানীবাজারের ৩ নারীর অজানা কথা

admin
  • আপডেট টাইম : মার্চ ০৮ ২০২২, ১৯:৩৬
  • 669 বার পঠিত
নারী দিবস: বিয়ানীবাজারের ৩ নারীর অজানা কথা

স্টাফ রিপোর্টার:

 

আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপি সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর আজকের এই দিনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। জাতিসংঘ ২০২২ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে “নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ”। এই মূল প্রতিপাদ্যের আলোকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- “টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য”।

 

এই দিনটিকে উপলক্ষ করে বিয়ানীবাজারের ৩ নারীর অজানা কথা তুলে ধরা হল।

 

নাসিম ফেরদৌস:
নাসিম ফেরদৌস বাংলাদেশের একজন প্রাক্তন কূটনীতিবিদ। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী নারী যিনি বৈদেশিক কর্মসংস্থানে যোগ দিয়েছেন। তিনি ১৯৫০ সালের ১১ নভেম্বর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের আদিনাবাদ গ্রামে, পিতার নাম মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান চৌধুরী ও মাতার নাম সৈয়দা লুৎফুননেসা খাতুন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান চৌধুরী অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের দায়ে ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতনে দেশত্যাগী হয়ে সিঙ্গাপুরে এক জাহাজ কোম্পানিতে যোগ দেন। পাকিস্তান স্বাধীনের পর দেশে ফিরে তিনি পি.আই.ডি.সি.তে কর্ণফুলী পেপার মিলস’ এর জি.এম পদে যোগ দেন। সেখান থেকে ১৯৫৯ সনের সেপ্টেম্বর মাসে হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় চাকুরি ছেড়ে দেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা নাসিম ফেরদৌস করাচিতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ১৯৬৯ সালে ক্যান্টনমেন্ট মডার্ন হাই স্কুল, ঢাকা থেকে কৃতিত্বের সহিত ম্যাট্রিক পাস করেন ও কর্মকালিন সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে হার্বাড কেনেডি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.পি.এ সম্পন্ন করেন। ১৯৭৭ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দেন নাসিম ফেরদৌস। এ পরীক্ষায় বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন নাসিম ফেরদৌস। তিনি বাংলাদেশে পররাষ্ট্র সার্ভিস ক্যাডার থেকে ১৯৭৯ সালের ১লা মার্চ প্রথম নারী কূটনীতিক হিসেবে পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগ দেন। ২০০২ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও মিশর, সাইপ্রাস, পূর্ব তিমুর ও পাপুয়া নিউগিনিতে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি এই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। নাসিম ফেরদৌস বলেন, “আমি যখন চাকরিতে যোগ দেই তখন আমার মনে হয়েছিলো আমি একটি কাঁচের বাক্সে ঢুকে পড়েছিলাম। এই কাঁচের বাক্স ভেঙে সমতা নিয়ে আসা বা বর্তমান পর্যায়ে আসা ছিল‌ খুবই বড় চ্যালেঞ্জ।” তিনি এক সন্তানের জননী।

 

 

স্বপ্নারা খাতুন:
ব্রিটেনে বিচারক পদে প্রথমবারের মত কোনো বাংলাদেশি নারী নিয়োগ পেলেন। ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির মুখ উজ্জল করে সার্কিট জজ হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার ব্যারিস্টার স্বপ্নারা খাতুন। তিনি মোল্লাগ্রামের প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মরহুম মিম্বর আলীর মেয়ে। স্বপ্নারা খাতুনের পিতা মিম্বর আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডন প্রবাসীদের মধ্যে অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তার অবদানের জন্য তাকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। স্বপ্নারা খাতুন পারিবারিকভাবে দীর্ঘ দিন ধরে ব্রিটেনে বসবাস করছেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।

খাসি মেয়ে কাঁকেট:
শহীদ নারীদের প্রতি রাষ্ট্রের উদাসীনতা আরও প্রকাশ পায় শহীদ নারীদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য দিতে কিংবা সংগ্রহে রাষ্ট্রের অস্বীকৃতি। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘স্মৃতি ১৯৭১’ এর বিভিন্ন খন্ডেমাত্র চারজন নারী শহীদের কথা জানা যায়। তারা হলেন, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা হোসেন, শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা, মাগুড়ার শহীদ লুৎফুন নাহার হেলেন এবং শহীদ ড. আয়েশা বদোরা চৌধুরী। অথচ সেখানে নেই বিয়ানীবাজারের এক শহীদ নারীর গল্প। খাসিয়া মেয়ে কাঁকেট প্রাণ দিয়েছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে, মুক্তিবাহিনীর পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে। সাহসী ওই নারীর কাহিনী মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাসকেই হার মানায়। ভিক্ষুক সেজে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন খোঁজ-খবর তিনি এনে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের, পরবর্তীতে রাজাকারদের সহায়তায় তিনি ধরা পড়েন পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে। তাঁকে জিপের সঙ্গে বেঁধে হত্যা করা হয়।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর