ই-ভ্যালি’র বাইকে ধরা খেয়েছেন বিয়ানীবাজারের অর্ধশ’ত যুবক!

admin
  • আপডেট টাইম : নভেম্বর ১৬ ২০২১, ১০:১৫
  • 910 বার পঠিত
ই-ভ্যালি’র বাইকে ধরা খেয়েছেন বিয়ানীবাজারের অর্ধশ’ত যুবক!

স্টাফ রিপোর্টার:

একটি বেসরকারি প্রতিষ্টানে চাকরি করেন তিনি। বোনের জমানো টাকা দিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালিতে প্রায় ছয় লাখ টাকার চারটি মোটরবাইক অর্ডার দিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময় পার হলেও পাননি কাঙ্ক্ষিত মোটরবাইক। উল্টো এখন বোনের প্রয়োজনে টাকা ফেরত দিতে পারছেন না।

চারদিকে অন্ধকার দেখা ওই ব্যক্তি (ছদ্মনাম শাকিল হাসান) বলেন, ‘দুলাভাই, বোনকে টাকার জন্য চাপ দিয়েছেন। কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা।’

 

পরিচয় গোপন করে শাকিল হাসান আরও বলেন, ‘আমার বোনের অ্যাকাউন্টে চার লাখ টাকার মতো ছিল। ভগ্নিপতি বিদেশ যাবেন, সেজন্য টাকাগুলো রাখা হয়েছিল। গত জুন মাসে তিনি (ভগ্নিপতি) আমাকে সেই টাকা ব্যবহারের অনুমতি দেন। তবে তিন মাসের মধ্যে টাকাগুলো ফেরত দিতে হবে। পণ্য অর্ডার দেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির আশায় টাকাগুলো নিয়েছিলাম। কিন্তু ই-ভ্যালিতে পণ্য অর্ডার দিয়ে টাকা আটকে যাওয়ায় এখন তা ফেরত দিতে পারছি না। এখন ভগ্নিপতির বিদেশে যাওয়ার তারিখ চলে এসেছে। টাকাগুলো না পেলে বোনের সংসার টিকবে না।’

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা ও পুনঃবিক্রির জন্য মূলত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে মোটরবাইকগুলোর অর্ডার দিয়েছিলেন শাকিল। তারমত বিয়ানীবাজার উপজেলার কমপক্ষে অর্ধশ’ত যুবক মোটর সাইকেল অর্ডার দিয়ে ধরা খেয়েছেন। তারা এখন পরিবারের জন্য রীতিমত বোঝা।

শাকিল বলেন, বোনের গচ্ছিত টাকাগুলো জুন মাসে নিই। ওই মাসের মাঝামাঝি ইভ্যালিতে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোটরবাইক (অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ ফোরভি) অর্ডার করি। নির্ধারিত সময়ে বাইকটি দিতে না পেরে এর বিপরীতে তারা আমাকে একটি চেক দেয়। বলে, তাদের ফোন পেলে চেকটি নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে ক্যাশ করতে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের ফোন পাইনি। আদৌ চেক ক্যাশ করতে পারব কি না, তাও জানি না।

তিনি বলেন, ‌’তাদের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়েছি। তারা সমাধান দিতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সেলস, কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনকে কল-বার্তা দিয়েছি। কিন্তু ‍তিনি সিন করে রেখে দেন। কোনো রিপ্লাই দেন না।’

ই-ভ্যালি’র প্রতারণার শিকার এমন ভুক্তভোগী কয়েকজন বলেন, তারা ইভ্যালিতে পণ্যের জন্য টাকা দিয়ে প্রায় নিঃস্ব হওয়ার পথে।

কলেজ পড়ুয়া তরুণ আরাফাত বলেন, ‘চলতি বছর জানুয়ারিতে ইভ্যালিতে একটি মোটরবাইক ও একটি ফ্রিজের অর্ডার দিই। বাইকটি পেয়েছি। পরে আরেকটি ফ্রিজ ও দুটি বাইকের অর্ডার দিই। সবমিলিয়ে তিন লাখ ৬৮ হাজার টাকার পণ্য। এর মধ্যে অফিসের দুজন সহপাঠি আমাকে ৯০ হাজার টাকা দেন। ইচ্ছা ছিল বাইকগুলো বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা মুনাফা করব। এখন লাভ-আসল সবই গেল। প্রতিনিয়ত পরিবারের লোকজন ও সহকর্মীদের কাছ থেকে মুখ লুকাতে হচ্ছে।’

শামীম নামের অপর এক ভুক্তভোগী ই-ভ্যালিতে পণ্য অর্ডার করেছিলেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অস্তিত্ব না থাকায় টাকা ফেরত পাওয়ার পথও বন্ধ হয়ে গেছে তার।

একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী ওয়াহিদ বলেন, ‘ইভ্যালি থেকে ছয় লাখ টাকার পণ্যের অর্ডার দিই। টাকা পাওয়ার আর কোনো পথ দেখছি না। আত্মীয়-স্বজন অনেকের কাছ থেকে ধারে টাকা নিয়েছি। তাদের কাছ থেকে নিয়মিত সময় নিচ্ছি।’

ই_ভ্যালির এ্যাপসও বন্ধ। যোগাযোগের কোন উপায় নেই। বিয়ানীবাজারের যুবকদের পক্ষ থেকে এমন প্রতারণার বিষয়ে কেউই আইনের আশ্রয় নেয়নি। তবে মোটর সাইকেল ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য উপজেলার আরো প্রায় ৪শ’ যুবক ই-ভ্যালিতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। যারা মুখ খুলছেননা।

জানা যায়, মোটর সাইকেল ইলেকট্রণিক পণ্য ছাড়াও অনেক যুবক মুদি পণ্য ক্রয় করতেন ই-ভ্যালি থেকে। তারা কমদামে পণ্য ক্রয় করে বাড়তি লাভের আশায় অনেকের কাছ থেকে দারদেনা করে বিনিয়োগ করেছেন। ই-ভ্যালির কথা বললেই তারা অসহায় হয়ে বসে থাকেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন
0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর