বিয়ানীবাজারে টিকটক লাইকির ব্যবহারে আসক্ত তরুন ও ছাত্র ছাত্রীরা, উদ্ধিগ্ন সচেতন সমাজ

admin
  • আপডেট টাইম : সেপ্টেম্বর ০৫ ২০২১, ১৭:৪০
  • 931 বার পঠিত
বিয়ানীবাজারে টিকটক লাইকির ব্যবহারে আসক্ত তরুন ও ছাত্র ছাত্রীরা, উদ্ধিগ্ন সচেতন সমাজ

স্টাফ রিপোর্টারঃ
দেড় বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুবাধে সারাদেশের ন্যায় সিলেটের পূর্বাঞ্চলের উপজেলা গুলো এখন করোনাকালীন সময় পার করছে।স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের কিছু শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকর্মে। তার মধ্যে টিকটক লাইকি ভিডিও অন্যতম।সেই প্রতিযোগিতায় ভিডিও করতে দামি ক্যামেরা ও স্মার্ট ফোন হাতে নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায়। ভিডেওতে দেখা যায়, ছেলেদের মটরসাইলের পিছনে বসে (স্বামী স্ত্রীর মতো ) অন্তরঙ্গ ভাবে সময় কাটাচ্ছেন অনেকে সিলেট বিভাগের নামি দামি রিসোর্ট, হোটেল রেঁস্তোরা কিংবা মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যে।
অনুসন্ধান ও টিকটক লাইকির এই ভার্চুয়াল জগত ঘুরে দেখা যায়, সংঙ্গবদ্ধ কিশোর গ্যাং বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, বড়লেখা, কুলাউড়ার কিছু তরুণ তরুণীরা শেওলা সেতু ও কাকরভিলা, মাধবকুণ্ড, দাসের বাজার, শাহবাজপুর চা বাগান, জাফলং পর্যটন এলাকায় ঘুরে ঘুরে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা ভার্চুয়াল জগত টিকটকে ছেড়ে দিচ্ছেন। সংঘবদ্ধ চক্রটির ছেলেটি মেয়েটির হাত ধরে প্রেম নিবেদন কিংবা পশ্চিমা সংস্কৃতির নাইট ক্লাবের অনুকরণে নাচানাচি করছে।গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিন এলাকার মেয়েটি কিছু দিন পর পর বিয়ানীবাজার এসে বিভিন্ন এলাকার তরুণ তরুনীদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করে। টিকটকাররা ঐ তরুণীকে খারাপ মেয়ে বলে আখ্যায়িত করেন। তাদের দেখে বিয়ানীবাজার উপজেলার তরুণ তরুণীরা অনুপ্রাণীত হয়ে তাদের অনুকরণের পথে হাঁটছে।
গত কিছুদিন থেকে ফেসবুক ও অনলাইন পোর্টালে দেখা যায়, বৈরাগীবাজারের এলাকার মানসিক প্রতিবন্ধী মজনু কে নিয়ে তৈরি হচ্ছে ভিডিও। মজনু গালাগালি করছে, অশ্লীলভাবে নাচানাচি করছে এলাকার কিছু তরুণ ও যুবকদের সাথে। তাদের কর্মকাণ্ডে সারাবিশ্বে নেতিবাচক দৃষ্টিতে পরিণত হচ্ছে বৈরাগীবাজার তথা বিয়ানীবাজার উপজেলা।সচেতন মহলের প্রশ্ন- তরুণ তরুণীদের উচ্চ বিলাশী চলাচলের বিশাল এই টাকার উৎস কোথায়।তরুণীরা কি তাহলে বিলাশ বহুল চলাচলের জন্য নিজের যৌবন বিক্রি করে দিচ্ছেন। নাকি মানব পাচারকারী হৃদয় বাবু ও দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী ফারজানার পথে হাঁটছে আমাদের এলাকার তরুণ ও যুব সমাজ।
সাম্প্রতিক সময়ে নানকার স্মৃতিসৌধে জুতা পায়ে সিগারেটের ধোঁয়া টানতে টানতে উপরের সিঁড়ি থেকে নিচের সিঁড়িতে নামছেন স্থানীয় এক মুক্তিযাদ্ধার সন্তান। পরবর্তীতে বিয়ানীবাজার পৌরসভা কার্যালয়ে সালিশ বৈঠকে ছেলেটি এ রকম কাজ আর করবে না বলে ক্ষমা চায়।
করোনার মহামারিকালীন সময়ে শেওলা সেতুতে এম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগী তাকা অবস্থায় এম্বুলেন্স থামিয়ে ভিডিও তৈরি করেন কয়েকজন যুবক। এই ঘটনা ফেইসবুকে বহু সমালোচিত হলে পরবর্তীতে এই যুবক অনুশোচনা প্রকাশ করে তার আইডিতে একটি ভিডিও আপলোড করেন।
প্রযুক্তির করালগ্রাস থেকে বাদ যাচ্ছে না কোমলমতী শিশুরা। যুবক যুবতিরা শিশুদের দিয়ে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা আপলোড করছেন নিজেদের আইডিতে। বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য ভাড়ায় নেওয়া ক্যামেরা ম্যান তার ব্যক্তিগত আইডিতে বিয়ের কনেসহ আগত মেয়েদের ভিডিও আপলোড করছেন। ঐ ভিডিওর মাধ্যমে মেয়েদের ছবি চলে যাচ্ছে বখাটে তরুণ যুবকদের কাছে। কিছুদিন পূর্বে এরকম একটি ভিডিও নিয়ে দুটি পরিবারের মধ্যে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়।
বিয়ানীবাজারের কয়েকজন সিনিয়র টিকটকার বলেন, আমাদের এলাকার কিছু নতুন উড়তি বয়সী ছেলে মেয়ে অল্পদিনে ভাইরালের নেশায় অশ্লীল ভিডিও তৈরিতে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা দীর্ঘদিন থেকে বিনোদনের জন্য সুস্থ ধারার টিকটক লাইকি ভিডিও তৈরি করছি। নতুনদের কাছে অনুরোধ আপনারা ঢাকার সাথে তাল মিলিয়ে চলাচল করলে হবে না। লক্ষ রাখতে হবে আমরা উপজেলা শহরের মানুষ পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে এখানে বসবাস করি।
সুশানের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বিয়ানীবাজার উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ও পূর্ব মুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদ আহমদ বলেন, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের দিকে বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। আসা করি শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের ভালো ও শিক্ষনীয় দিক গ্রহন করবে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে গেলে তারা পড়ালেখার দিকে ধাবিত হবে।ইন্টারনেটের আসক্তি কমে যাবে।
বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিলাদ মোহাম্মদ জয়নুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকার তরুণ তরুণীরা প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অশ্লীলতায় নিমজ্জিত না হয় তার দিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি দিবেন। সচেতন অভিবাবকরা অশ্লীলতার তত্ত্ব দিয়ে বিয়ানীবাজার থানা পুলিসকে সহযোগীতা করবেন।
বিয়ানীবাজার থানার ওসি হিল্লোল রায় বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলার টিকটক লাইকি ব্যবহারকারীদের দিকে আমাদের কঠোর নজিরদারী রয়েছে। কোনো ধরনের অশ্লীল ও অনৈতিক কাজ আমাদের চোখে পড়লে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিয়ানীবাজারকে শান্তি পূর্ণ রাখতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জামাল হোসেন বলেন, টিকটক লাইকির এই দৌরাত্ম দূর করতে না পারলে বিয়ানীবাজার উপজেলাবাসীর মধ্যে সামাজিক অবক্ষয় চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা বেগম লিমা বলেন,
ইদানীং আমাদের এলাকার তরুণ তরুণীরা টিকটক লাইকি তৈরিতে ব্যস্ত। গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা দেখি ছেলে সহপাঠিদের মাধ্যমে মেয়েরা শ্লীলহানীর শিকার হন বেশি।তাই আমাদের এখানে যে মেয়েরা তার ছেলে সহপাঠির সাথে টিকটক ভিডিও তৈরি করতে দিকবিদিক চলাচল করছেন তার কাছ থেকে সে কতটুকু নিরাপদ তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে পারিবারিক সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। তরুণ কথাসাহিত্যিক আহমদ রেজা চৌধুরী বলেন, টিকটক লাইকি বিনোদন হিসেবে ব্যবহার করা ইতিবাচক দিকের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এই বিনোদন যেন অশ্লীলতা কিংবা পাগলামি তথা নেতিবাচকের পর্যায়ে পৌঁছে না যায়, সেদিনে সকলের দৃষ্টি রাখাই কর্তব্য। নাহলে বিয়ানীবাজারবাসীর উপর জাতীয় পর্যায়ের মতো এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর