করোনার কাছে হার: দশ হাসপাতাল ঘুরে ভাগ্যে জুটেনি অক্সিজেন সার্পোট লাল চান বিবির

admin
  • আপডেট টাইম : জুলাই ৩১ ২০২১, ১৮:৫১
  • 939 বার পঠিত
করোনার কাছে হার: দশ হাসপাতাল ঘুরে ভাগ্যে জুটেনি অক্সিজেন সার্পোট লাল চান বিবির

 

স্টাফ রিপোর্টারঃএক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল। এভাবে সিলেটের ১০টি হাসপাতালে লাল চান বিবিকে নিয়ে ঘুরেছেন স্বজনরা । কোনো হাসপাতালেই পাওয়া যায় নি অক্সিজেন সার্পোট লাল চান বিবির (৮০ )স্বজনদের কাকুতি মিনতি কেউ শুনেনি। সর্বশেষ শনিবার সিলেটের সব হাসপাতাল থেকেও ফিরিয়ে দেয়া হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত সেই বৃদ্ধার ঠাই হয় বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে। কিন্তু ভর্তির তিন ঘন্টা পরেই শনিবার বিকাল ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লাল চান বিবি ।
৮০ বছরের বৃদ্ধা লাল চান বিবি। বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার গ্রামতলা এলাকায়। শ্বাসকষ্ট ও জ্বরসহ কভিডের সবকটি উপসর্গ তার শরীরে উপস্থিত রয়েছে। শুক্রবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। দেখা দেয় অক্সিজেন সংকট।

স্বজনরা শনিবার সকালে তাকে নিয়ে প্রথমে বিয়ানীবাজার ও পরে সিলেট নগরীর কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরেও সিট মিলেনি। অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য এম্বুল্যান্সযোগে স্বজনরা একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেছেন। কোথাও পাননি অক্সিজেন সাপোর্ট।

জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের ১০টি শয্যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত খালি পড়ে ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের সেই শয্যাগুলো প্রায় পূর্ণ হওয়া হয়েছে। দশ শয্যার সব কয়টিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত রোগী। এসব রোগীদের একজন হচ্ছেন লাল চান বিবি।
করোনা আক্রান্ত লাল চান বিবি সিলেটের দশটি হাসপাতাল ঘুরে জায়গা না পেয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের মানবিক সহায়তায় ওই হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পান। বড়লেখার এই নারী নানা দুর্ভোগ-ভোগান্তি শেষে অ্যাম্বুলেন্সে থেকে বিয়ানীবাজার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন ঘন্টার পর মারা গেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ইসহাক আজাদ বলেন, ওই বৃদ্ধাসহ ১০ করোনা রোগীকে হাসপাতালের নির্ধারিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। লাল চান বিবির শ্বাসকষ্টের সমস্যা প্রকট। তাছাড়া শারীরিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। তাকে আমরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু তিনি ভর্তির তিন ঘন্টা পর মারা যান।

তিনি আরও বলেন, লাল চান বিবির শারীরিক অবস্থা উন্নত হবার সম্ভবনা কম ছিল। আমরা তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করেও ঠিকিয়ে রাখতে পারিনি।

তিনি বলেন, বৃদ্ধার স্বজনরা জানিয়েছেন সিলেটের দশটি হাসপাতালে তাকে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। কিন্তু কোথাও শয্যা না পেয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন তারা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছিল।

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, আমাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে দশটি শয্যা রয়েছে। এরই মধ্যে সবগুলো শয্যায় ভর্তিরত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। যদিও আমাদের হাসপাতাল করোনা ডিডেক্টেড নয়, তবুও বৃদ্ধা লাল চান বিবির শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে আমরা ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। কিন্তু তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন বিকালেই মারা গেছেন। এর আগে আমরা তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছি।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর