করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে ঢাকার চারপাশ

admin
  • আপডেট টাইম : জুলাই ০৯ ২০২১, ১০:২১
  • 1028 বার পঠিত
করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে ঢাকার চারপাশ


অনলাইন ডেস্কঃ

রাজধানী ঢাকার চারপাশের জেলা-উপজেলাগুলো করোনাভাইরাসের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে। প্রতিদিনই এসব এলাকায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ।
তবে অনেক জেলায় করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এ কারণে প্রতিদিনই এসব জেলা থেকে রোগীদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঢাকায় সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে গেল ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২০৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে গাজীপুরে ২২০ জন, মুন্সীগঞ্জে ৬৭ জন ও মানিকগঞ্জে ৬৭ জন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।
এছাড়া ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় এক সপ্তাহে ১৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যুগান্তর প্রতিবেদন ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খরব-নারায়ণগঞ্জ: প্রতিদিন তিনবার ট্রাকে ঢাকা পাঠিয়ে সিলিন্ডার রিফিল করে অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে করোনার ‘রেড জোন’ খ্যাত নারায়ণগঞ্জের কোভিড হাসপাতালের রোগীদের। আউট সোর্সিংয়ের আওতায় এখানে নেয়া ৪০ জন কর্মী বেতন পাচ্ছেন না ১ মাস ধরে। ৬টি বাড়তি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রেখেও সেগুলো চালু করা যাচ্ছে না অক্সিজেনের অভাবে। আর নিরাপত্তার অভাবে সন্ধ্যার পর এই করোনা হাসপাতালটি হয়ে উঠে প্রেমিক যুগল আর কিশোর বাহিনীর ভ্রমন কেন্দ্রে।
সরেজমিনে শহরের খানপুর কোভিড হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল রেকর্ড ২০৩ জন। ৪২৩টি নমুনা পরীক্ষায় এ ফল পাওয়া যায়। শনাক্তের হার প্রায় ৩৯ শতাংশ। শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা। তারা জানান, হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ শয্যার সবগুলোই এক সপ্তাহ ধরে রোগীতে পরিপূর্ণ। ফলে সংকটাপন্ন রোগীদের ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে।
স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, দেশের কয়েকটি অঞ্চলে কোভিডের ভয়াবহ অবস্থার কারণে সেখানে অতিমাত্রায় অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের প্রয়োজন হচ্ছে। তবে যেসব স্থানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টে এখনো লিকুইড অক্সিজেন দেয়া হয়নি, তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জকে ‘প্রায়োরিটি’ দেওয়া হবে।

মুন্সীগঞ্জ: সাত দিনে জেলায় শনাক্তের হার গড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ। যা জাতীয় হরের চেয়েও বেশী। অথচ জুন মাসে ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। ওই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ৯৯০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৫৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ১ জুলাই ১০৫ জনের বিপরীতে ৩৬ জন, ২ জুলাই ৪০ জনে ১৪ জন, ৩ জুলাই ১৩৩ জনে ৪৪ জন, ৪ জুলাই ২০৯ জনে ৬৫ জন, ৫ জুলাই ১৫২ জনে ৭০ জন, ৬ জুলাই ১৪০ জনে ৫৭ জন, ৭ জুলাই ২০১ জনে ৬৭ জন রোগী শনাক্ত হয়।

জেলার একমাত্র করোনা ইউনিটে নেই কোন আইসিইউ কিংবা ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা। তাই গুরুতর রোগীদের পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে ঢাকায়। চলতি মাসের সাত দিনে বৃহস্পতিবার ২ জনসহ ৮ রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে ইউনিটে মারা গেছেন দুইজন।

করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. জোবায়ের ইসলাম জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বর্তমানে ৩৭জন রোগী ভর্তি আছেন। প্রতিদিন গড়ে একজন রোগি আইসিইউর জন্য ঢাকা পাঠানো হচ্ছে।

গাজীপুর: লকডাউনের প্রথম সাতদিনে গাজীপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৬ জন। জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৫৬ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৬২ জন।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ কোভিড হাসপাতালে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনার উপসর্গ নিয়ে ৭৬ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ৬ জন রোগী আইসিউতে। গাজীপুর সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৮০৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলায় ১৫৩জন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৫জন, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৩৪জন, কাপাসিয়া উপজেলায় ১৩জন ও শ্রীপুর উপজেলায় ১৫জন। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ৯৩ হাজার ১৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ হাজার ৩৬২ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়ে।

মানিকগঞ্জ: জেলার ১০০ শয্যাবিশিষ্ট কোভিড ডেডিকেটেট হাসপাতালে ১২ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজন করোনায় ও দুইজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তবে জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় এ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে দুই-এক দিনে মধ্যে আইসিইউ চালু হবে বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক আরশ্বাদ উল্লাহ। তিনি জানান, রোববার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে পাঁচজন চিকিৎসক ও নার্সকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘন্টায় জেলায় ২০৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬৭ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে জেলায় ২ হাজার ৮৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৯৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের।

নবাবগঞ্জ: ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, এক সপ্তাহে ৪০১ জনের নমুনা পরীক্ষায় এখানে ১৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ২ জন। এ পর্যন্ত নবাবগঞ্জে মোট শনাক্ত হয়েছে ১৩২৩ জন।

শনাক্তের হার ৪৭.৬২ শতাংশ। দোহার উপজেলায় করোনা শনাক্তের হার ৬৬.১২ শতাংশ। সর্বশেষ ৬২ জনের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর