পুরানো প্রাসাদ — শাকেরা বেগম (শিমু)

admin
  • আপডেট টাইম : আগস্ট ২৮ ২০২০, ১৯:১৮
  • 1421 বার পঠিত
পুরানো প্রাসাদ — শাকেরা বেগম (শিমু)

পঞ্চম পর্ব
*********
আসাদের থাপ্পর খেয়ে আমি তিনহাত দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ি। মাথাটা প্রবলভাবে চক্কর খাচ্ছিলো। এতোক্ষণের ছুটাছুটির ক্লান্তি ও শেষে এই সিংহের থাবার মতো হাতের থাপ্পর খেয়ে আমি ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই। যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন দেখি আমি ছাদের উপরে জমিদারের আরাম করার জন্য রাখা বড় মাপের তোষকটার উপর শুয়ে আছি। আর আমার ঠিক একহাত উপরেই উপুর হয়ে ঝুঁকে আছে ঐ মানুষরূপী শয়তানটা! পরনে শুধুমাত্র একটা জাঙ্গিয়া সেটাও খুলতে বসেছে সে! আমি এ জগণ্য দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে জুড়াপায়ে তার বুকে লাঁথি বসিয়ে দেই। আমার লাঁথি খেয়ে সে বিছানা থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। তখন আমি উঠে বিছানার উল্টোদিকে দৌঁড় দেই। কিন্তু ওদিকে আমার পালানোর যে কোন রাস্তাই ছিলো না। ছিলো শুধু তিনফুট উঁচু রেলিং যেটি ছিলো ঐ ছাদের শেষাংশ। আমি তারপরও ওদিকেই দৌঁড়ে যাই। ততক্ষণে আসাদুজ্জামান নামের পিশাচটা আমার দিকে তেড়ে আসে। সে দৌঁড়ে এসে আমার ওড়নাটা ধরে হেঁচটা টান দেয়। আমি আর কোনদিকে না তাকিয়ে ছাদের রেলিং টপকে নিচে লাফিয়ে পড়ি।কিছুক্ষণ মনে হচ্ছিলো আমি বাতাসে ভাসছি। কিন্তু তার একটু পরই মনে হলো দশমণ ওজনের কোন পাথর আমার সমস্ত শরীরের হাড়গোড় সব গুড়ো করে দিয়েছে। চারদিকে নেমে আসে সীমাহীন অন্ধকার।।।

তারপর!! এরপর কি হলো মালিনী!? সাদিক কাঁপাকাঁপা সুরে জিজ্ঞেস করে।
মালিনীর প্রেতাত্মা কিছুক্ষণ রাগে ও ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে। তার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছিলো অশ্রুর মতো লাল রক্ত। এটা দেখে ওরা সকলে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। শেষে নাদিয়া বলে উঠে-
“বলোনা মালিনী তারপর কি তুমি বেঁচে ছিলে? নাকি অন্যকিছু হয়েছিলো?

মালিনীর অতৃপ্ত আত্মা উত্তর দেয়- “না! আমি নিচে পড়ার পর তখন আর বাঁচতে পারিনী। আমার মতো একটি মেয়ের দ্বারা বেঁচে থাকাটা সম্ভবও ছিলো না। আমার রক্তাক্ত নিথর দেহটা ওখানেই পড়ে থাকে পাঁচ মিনিট। শয়তানটা আর আমাকে বাঁচতে দেয়নি।
বরং তার ঘোর কেটে গেলে সে তখন নিচে নেমে এসে প্রহরীদের আদেশ করে মেঝেতে থাকা রক্তগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে ফেলতে। ওরা তখন তাদের কাজে লেগে পড়ে ও সে আমার লাশটাকে পাজাকোলা করে তুলে আবার ছাদের উপরে নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে সে আমার পরনের জামা-কাপরগুলো খুলে ফেলে। তারপর আমার বিবস্ত্র লাশ নিয়ে ছাদের উপরের গোসলখানার টবে রেখে পানি দিয়ে ভালো করে আমার লাশটি ধুয়ে তা থেকে রক্তগুলো সাফ করে নেয়। সে আমার লাশকে গোসল দিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু সেটা দাফন করার উদ্দেশ্যে নয়।বরং নরাধমটা আমার দেহটাকে নিয়ে সেই বড় তোষকের উপর রেখে দিয়ে ক্ষুদার্থ ব্যাঘ্রের মতো আমার দেহের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর সে আমার মৃতদেহটাকে হিংস্র পশুর মতো ছিড়ে ছিড়ে খায়। পুরো চার ঘণ্টা ধরে সে আমার লাশের সঙ্গে সঙ্গম করে। তার ধর্ষণ করা শেষ হলে সে আবার প্রহরীদের ডেকে বলে একটি লম্বা কাঠের বাক্স নিয়ে আসতে। প্রহরীরা বাক্স নিয়ে এলে সে আমার দেহকে ঐ বাক্সের মধ্যে রেখে এর মুখ তালাবদ্ধ করে দেয়।
এভাবে সে প্রতিদিন তিন তিনবার করে আমার লাশের সঙ্গে দৈহিক মিলন করতো। আর তার মনের পৈশাচিক কামনা নিবারণ করতো। আমার প্রাণহীন দেহের প্রতি এমন নির্দয় অত্যাচার দেখে আমার অতৃপ্ত আত্মা প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠে। সে এভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আমার দেহটাকে ছিন্নভিন্ন করে ভোগ করেছিলো। তারপর আমার দেহে পচন ধরা শুরু করলে আমাকে সে মোটা কাপরে মুড়ে এই বাক্সে বন্দী করে রাখে। পরে এই বাক্সটি লোকচক্ষুর অন্তরালে নিয়ে রেখে দেয়।

মালিনী’র কথা শুনে ওদের সবার চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে এলো। মেহেদী বললো-
“এখন আমরা তোমার জন্য কি করতে পারি তাই বলো মালিনী”? এসব কথা আর আমরা শুনতে পারছি না।
ওর কথার পিঠে জাকিয়া বলে উঠলো- “মালিনী, তার আগে তুমি বলো ঐ নারীলোভী শয়তানটার শেষ পরিণতি কি হলো? তার মৃত্যুটা কিভাবে হয়েছিলো? আর তার আত্মাও কি এখনো এই পুরানো প্রাসাদেই রয়ে গেছে?
মালিনী: হ্যাঁ সেকথাই বলছি তোদের। আমার পচে যাওয়া দেহটাকে যেদিন সে বাক্সে ভরে লুকিয়ে ফেললো, এর পরেরদিনই আমি তার ঘাড় মটকে ওর চোখ দুটো উপরে ফেলি। তারপর তার পা দুটি দু’দিক থেকে টেনে ছিড়ে ফেলি। তার লিঙ্গটা আমি আমার ক্রোধের আগুনে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেই। অত:পর তার এই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন লাশ নিয়ে দীঘির নিচে কাঁদায় পুঁতে রাখি। এর সাতদিন পর প্রাসাদের সবাই পরীর দিঘীতে তার ক্ষত-বিক্ষত লাশকে ভাসতে দেখে। তারা এ বীভৎস লাশ দেখে অনেকে বমি করে দেয় ও কয়েকজন ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। শেষে অত্যন্ত সাহসী দশজন সৈন্য মিলে তার লাশটাকে দীঘির পানি থেকে তুলে নিয়ে নীলাঞ্জনার জলে ভাসিয়ে দেয়। সেটা ভেসে চলে যায় দূর থেকে দূরে।।।
এই ঘটনার পর ভয়ে সকলে এ রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকেই এই প্রাসাদটি ভুতুড়ে পুরানো প্রাসাদ হিসাবে এভাবেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর