জি এম কিবরিয়াঃ একটি নাম ইতালী সহ সর্ব ইউরোপ ব্যাপী-অলি উদ্দিন শামিম

admin
  • আপডেট টাইম : আগস্ট ১০ ২০২০, ০৭:৪৯
  • 1298 বার পঠিত
জি এম কিবরিয়াঃ একটি নাম ইতালী সহ সর্ব ইউরোপ ব্যাপী-অলি উদ্দিন শামিম

ইতালির মাটিতে গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া একটি নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন ,শুধু বাঙালি কম্যুনিটিই নয় ,ইমিগ্রেশন আন্দোলনের সুফল যারা যারা ভোগ করেছেন প্রতিটি ব্যাক্তি তথা কম্যুনিটি যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে একটি নাম ,জি এম কিবরিয়া ,দীর্ঘ প্রায় ৩ যুগের কাছাকাছি সময় ধরে বাংলাদেশী সহ পৃথিবীর অনেক দেশের অনিয়মিত ভাবে বসবাসকারী অভিবাসীকে ইতালিতে বৈধ করণের যত গুলি ছোট বড় আন্দোলন হয়েছে ,যেমন সংসদ অভিমুখে যাত্রা ,শোভাযাত্রা ,পথসভা ,অনশন ধর্মঘট এই সবগুলিরই অগ্রভাগে যাকে দেখা যেতো সেই ব্যক্তিটির নাম জি এম কিবরিয়া ,আমার জীবনে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ সহ বহু দেশে গিয়েছি এবং সেই সমস্ত দেশের কার্যকলাপ দেখার সুযোগ পেয়েছি ,বাল্যকাল থেকেই প্রবাসের সমাজ নীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে মিছিল মিটিংয়ের অভিজ্ঞতাও কম নেই ,আর সেই কারণেই একটি স্মৃতি প্রতি মুহূর্তেই মনে পরে ,১৯৯৮ সালের শেষ দিকের কথা সদ্য আমার ইতালিতে পদার্পন ,এসেই দেখলাম স্বদেশের ন্যায় আন্দোলন ,তবে বলে রাখা জরুরি আমাদের দেশের মত অসভ্যমি নয় ,কোনো যান মালের ক্ষতি সাধন নয় ,কারো গায়ে হাত উঠানো নয় ,সেটা হলো নিয়ম নীতির ভিতরে থেকে অধিকার আদায়ের আন্দোলন ,কথা উচ্চস্বরে বললেই কাজ হয় না ,মূল্যবান কথা আস্তে বললেই যথেষ্ট।
আমার আগে যারা ইতালিতে এসেছে ১০/১১ বছর পর্যন্ত হতে চলছে বৈধ হতে পারেনি আর আমি এসেই শুনি বৈধতার খবর ১৯৯৮সাল নিঃসন্দেহে মহা আনন্দের সংবাদ আমার জন্য তাই সব কিছু বাদ দিয়ে ইমিগ্রান্ট আন্দোলনের দিকে ছুটলাম ,খুব সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ট্রাম যোগে রোমের প্রাণ কেন্দ্র ভিক্টোরিয়ায় ট্রাম থেকে নামতেই দেখলাম সুবিশাল মিছিলের প্রস্তুতি ,অগ্রভাগে মাথায় কালো ক্যাপ হাতে মাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলা মায়ের সাহসী সন্তান ,গোলাম কিবরিয়া ,চলছে ধারাবাহিক ভাবে কর্মসূচি ,কয়েকদিন পরই বিশাল কর্মসূচি দেওয়া হলো ২০০০সাল ,খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মহামান্য পোপকে স্বারক লিপি দেওয়ার উদেশ্যে ভ্যাটিকান অভিমুখে যাত্রা প্রায় ৪০ টি দেশের অধিবাসীর এক স্মরণ কালের বিশাল মিছিল প্রায় ২৬হাজার অভিবাসী অংশগ্রহণ করে মনে হচ্ছিলো কয়েক কিলোমিটার লম্বা আর সেই মিছিলেরও নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন বাঙ্গালির অহংকার গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া ,শুধু মিছিলই নয় পূরো আন্দোলনেরই আহ্ববায়ক ছিলেন গোলাম কিবরিয়া ,আমি লোক মুখে যত টুকু শুনতে পেরেছি এবং পরবর্তীতে স্বচোখে দেখেছি জি এম কিবরিয়ার এই সাহসিকতার পিছনে যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে বেশি শক্তি যোগান দিয়েছেন তিনি হলেন তার সুযোগ্য সহধর্মিনী বর্তমান আওয়ামীলীগ নেত্রী ও রোম সিটি কর্পোরেশনের একমাত্র মহিলা কনসুল্তা জনাবা ,হোসনে আরা কিবরিয়া , তত্কালীন বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর সভাপতি জি এম কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক জনাব,নূরে আলম ছিদ্দিকী বাচ্চু ও আমার শ্রদ্ধাভাজন বড় ভাই ওয়াসি উদ্দিন আহমদ ছিলেন কোষাধ্যক্ষ, তখনকার সময়ে আমরা পাসপোর্ট জমা করতে রোম দূতাবাসে কোন ঝামেলা পোহাতে হত না কারন সেই সময় আমরা সবাই সত্মফূর্ত ভাবে ১০মিলা লিরা দিয়ে বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর গর্বিত সদস্য পদ গ্রহণ করি এবং পাসপোর্ট সার্টিফিকেট সহ বাংলাদেশী সকল ডকুমেন্টের কাজ বাংলাদেশ সমিতির অফিস পিয়াচ্ছা দান্তে থেকে নিখুঁত ভাবে সম্পাদন করে দূতাবাসে গিয়ে শুধু মাত্র সরকারি ফি দিয়ে জমা করি।২০০১ সালে যখন আমাদের হাজার হাজার আবেদন ইতালী সরকার বাতিল ঘোষণা করে তখন বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর সভাপতি জি এম কিবরিয়ার নেতৃত্বে পিয়াচ্ছা রিপুবলিকায় আমরা দীর্ঘদিন অনশন ধর্মঘট পালন করি শেষ পর্যন্ত ইতালী সরকার সবাইকে পের্মেচ্ছো দি সৌজর্ন দিতে বাধ্য হয় এবং শর্ত জুড়ে দেয় বাংলাদেশ দূতাবাস সবাইকে সত্যায়িত সার্টিফিকেট দিতে হবে যে সবাই ৯৮ সালের মার্চের পূর্বে থেকে ইতালীতে অবস্থান করছেন।তখন আমার মনে আছে হাতে সময় মাত্র কয়েক ঘণ্টা তখনই জনাব কিবরিয়া সবাইকে নিয়ে পিয়াচ্ছা ত্যাগ করে দূতাবাসে অবস্থান নেন এবং তত্কালীন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন সাহেবের সহযোগিতায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কয়েক হাজার লোক সবাইকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় এবং আমরা সবাই তখন পের্মেচ্ছো দি সৌজর্ন পেয়ে থাকি।আর এই সবগুলি দায়িত্ব অতি নিখুঁত ও সফলতার সাথে যেই ব্যক্তিটি সম্পাদন করেছেন তার নাম গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া ,তথ্যমতে গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়ার জন্মস্থান বরিশাল জেলার মুলাদী থানায় ,গ্রাম কুতুব পুর ,পিতার নাম :মেজবা উদ্দিন ভূঁইয়া ,মায়ের নাম :মোসাম্মৎ মরিয়ম বেগম ,স্ত্রী মিসেস হুসনে আরা কিবরিয়া ,একমাত্র মেয়ে লিন্ডা লন্ডনে মেডিক্যালে পড়ছে ,একমাত্র ছেলে লন্ডনে পড়াশোনা করছে,যদিও জনাব কিবরিয়া সাহেবের বাড়ি বরিশালে কিন্তু উনি সবার কাছে ছিলেন বাংলাদেশী।ব্যক্তি কিবরিয়ার চেয়ে টাকা ওয়ালা হয়তো ইতালিতে অনেক আছে ,কিন্তু ব্যাক্তি কিবরিয়ার মত পাহাড় সম মনের অধিকারী কয়জন আছে আমার জানা নাই ,কয়েক দিন পূর্বে আমার শ্রদ্ধা ভাজন বড় ভাই জনাব ,ওয়াসি উদ্দিন আহমদ তার স্ট্যাটাসে লিখেছিল ব্যাক্তি কিবরিয়ার সামনে বারে অথবা কফি সপে কেউ বিল দিতে পারেনি ,অনেক দিন পর লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগছিলো , আর আমি খুব কাছে থেকেই জনাব কিবরিয়া সাহেবকে দেখেছি কারন আমি যখন ইতালীতে নতুন আসছি আমাদের হবিগঞ্জের জাহাঙ্গীর ভাইয়ের বাসায় থাকতাম।জাহাঙ্গীর ভাই আর কিবরিয়া ভাই দুইজন ছিলেন ব্যবসায়ীক পার্টনার সেই সুবাদে।

এবার আমার পক্ষ থেকে একটু বলি নুতন অবস্থায় একটি স্থানে আসলে যেমনটি হয় ,ইমিগ্রেশন জমা দিতে যেই সমস্ত পেপার সাবমিট করতে হবে কোনো কিছুই আমার কাছে ছিল না ভালো ইতালিয়ান ভাষা বুঝতাম না তখন জাহাঙ্গীর ভাইয়ের মাধ্যমে কিবরিয়া ভাই আমার ইতালিয়ান কোম্পানির সাথে কথা বলে সব কিছুই নিমিষে জোগাড় করে দিয়েছিলেন।এই মুহূর্তে রোমের বাঙালি কমিউনিটির এই ঘুনে ধরা সমাজে জনাব ,কিবরিয়াদের মতো মানুষ অনেক প্রয়োজন , বিপুল ভোটে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ইতালীর সভাপতি নির্বাচিত ,ইতালি ও বাংলাদেশে সমান ভাবে সফল ব্যবসায়ী এবং নিঃসন্দেহে হাস্যোজ্জ্বল ও সদালাপী তার কীর্তি ইতালিতে অনন্ত কাল বহমান থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা ,
অলিউদ্দিন শামীম
সভাপতি
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইতালী।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর