স্কুলের অসমাপ্ত প্রেমের গল্প – আরিফুল ইসলাম

admin
  • আপডেট টাইম : মে ০১ ২০২০, ১৮:৪২
  • 2223 বার পঠিত
স্কুলের অসমাপ্ত প্রেমের গল্প   – আরিফুল ইসলাম

জীবনের প্রথম ভালোলাগা, ভালোবাসার (First Love) সূচনা স্কুল জীবনে। এখনকার মতো তখন এমন ফেসবুকে চ্যাটিং বা রাতভর ফোনে টকিং করার মতো সুযোগ ছিলো না। কিন্তু আমি ছিলাম ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’…

আমার মতো মিনমিন স্বভাবের ছেলেদের তো মেয়েদের সামনে দাঁড়ালে দুই পা কাপা শুরু হতো! হৃদয়ের কথা বলার সুযোগ কই? ফেসবুক সেই সুযোগ করে দিলো। মেয়েদের সামনে দাঁড়াতে পা কাঁপতো, কিন্তু ফেসবুকে Hi/Hello টেক্সট করতে তো পা কাঁপবে না, তাইনা?

স্কুল জীবনে প্রথম যার প্রেমে পড়েছিলাম, তার নাম কি আমার এখন মনে আছে? স্মৃতির অ্যালবাম খুলতে হচ্ছে তার নাম জানতে, তার সাথে কাটানো সুখ-স্মৃতিগুলো খুঁজে বের করতে হচ্ছে। অথচ এক সময় মনে হতো, সে আমার অস্তিত্বের মূল। আমার জন্মই হয়েছে তাকে পাবার জন্য, তার জন্ম হয়েছে আমাকে পাবার জন্য।

আমি তো গুনগুন করে তাকে সম্বোধন করতাম- You’re the color of my blood…! অথচ আজ তাকে আমার মনেই পড়ছে না? তার সাথে চোখাচোখি করার জন্য তো স্কুলে কতো চেষ্টা করতাম, দেয়াল টপকাতাম। তাকে একবার দেখতে পেলে মনে করতাম, আমার দিনটাই ধন্য। তখন তো আমি জহির রায়হানের ‘একুশের গল্প’ -এর মতো বলতাম- “আমি তার শ্বাস-প্রশ্বাসের খবর রাখতাম।”

অথচ আজ সে যদি সামনে এসে দাঁড়ায়, তাহলে হয়তোবা আমি তাকে চিনতে পারবো না। অস্ফুটে বলেও ফেলতে পারি- “আপনি কে? কাকে চাই?” সে যদি আমার ‘ব্লাড’ হতো, তাহলে আমি এতোদিন ধরে তাকে ছাড়া কিভাবে আছি? তাকে পাওয়াই যদি আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে আজ এতোবছর পর তাকে হারানোর বেদনায় আমার বুকে চিনমিন ব্যাথা করা উচিত। অথচ, সবই ঠিক আছে।

আমি কতো যে বলেছি- “তোমাকে না পেলে বাঁচবো না”। অথচ আমি বেঁচে আছি। শুধু বেঁচে আছি না, অনেক অন্নেক সুখে আছি। তাহলে স্কুল জীবনের ভালো লাগা, ভালোবাসার মানুষটি আসলে কী ছিলো?

প্রতি সেকেন্ডে যতোবার হৃদস্পন্দন করতো, ততোবার সে আমার চিন্তায় ছিলো। তাকে বলতাম- “তোমার মা-বাবা তোমার যতোটা না কেয়ার করে, আমি তারচেয়ে বেশি তোমাকে কেয়ার করি।” অথচ আজ এতোবছর হয়ে গেলো, আমি একবার তার খোঁজ-ই নিলাম না। এই ছিলো আমার ‘কেয়ার’?

স্কুল জীবনে তাকে ‘ভালোবাসি’ এটা প্রমাণ করার জন্য তো ব্লেড দিয়ে হাত কাটতাম। তাকে বুঝিয়ে দিতাম- শুধু হাতে নয়, এই হৃদয়ে তোমার নাম লিখা। অথচ আজ হৃদয়ে তার নাম লেখা দূরে থাক, তার নামটাই কী সেটাই ভুলে গেছি। আছে শুধু হাতের ক্ষত!

জীবনের প্রথম ভালোবাসা / First Love তাহলে কী ছিলো? তাকে ঘিরে যে স্বপ্ন দেখতাম, সেগুলোই বা কী? নাকি আমাদের ফার্স্ট লাভ সেই লিরিক্সের মতো ছিলো- ‘চাঁদের আলোয় তুমি কখনো আমার হবে না’?

আজ এতো বছর পর সবগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজা আমাদের জরুরি। ‘পুরনো সেই দিনের কথা…’ বলতে গেলে আমরা মুখ টিপে হাসি। মনে মনে বলি- কী বাচ্চামো না করেছি আমরা। ঐ সময় আমরা যা যা করেছি, সবকিছুকে একটা শব্দ দিয়ে আমরা ডিফেন্ড করি। আর সেটা হলোঃ ইম-ম্যাচিউরিটি। আমাদেরকে কেউ ঘটনাগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে আসলে আমরা বলি- আরে তখন তো ছোটো ছিলাম, এসব বুঝি নি।

মজার ব্যাপার হলো, আজ আমরা যেসব কাজ করছি, যেসব আবেগীয় কথাবার্তা বলছি, স্কুল জীবনের মতো না হলেও ‘ম্যাচিউর’ আবেগ এখন আমরা লালন করছি, আজ থেকে দশ পনেরো বছর পর সেটার কথা মনে পড়লেও হাসবো। তখন আজকের আবেগটাকে ‘ইম-ম্যাচিউর’ বলবো।

তারমানে কখনোই আমরা বর্তমান সময়ে ‘ম্যাচিউর’ না, আমরা কি এটাই বলতে চাই? স্কুল জীবনে যেসব ‘ভুল’ করেছি, আজ হয়তোবা সেসব ভুল করছি না। কিন্তু আজ যেসব ‘ভুল’ করছি, সেটা ধরা পড়বে আরো দশ-পনেরো বছর পর।

আমরা ‘ইম-ম্যাচিউরিটি’র ট্রেনে উঠেছি। ট্রেনে চড়ার সময় ফেলে যাওয়া বাড়ি-ঘর, গাছপালা মুহূর্তের মধ্যে অতীত হয়ে যায়। তেমনি আমাদের বর্তমানের ‘ম্যাচিউর’ কাজগুলোও একটু অতীত হবার পর ‘ইম-ম্যাচিউর’ হয়ে যায়।

আমাদের কি চিন্তা করা উচিত, ট্রেনের শাটল ধরে টান দিয়ে ‘ইম-ম্যাচিউরিটির’ ট্রেন থেকে নেমে পড়বো কি-না?

কবি যাকিয়া আল-উতাইবি আমাদেরকে যেন এই কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন-

“ভুল কোনো ট্রেনে যদি উঠেই পড়ো
পরের স্টেশনেই নেমে যেয়ো।
ট্রেন যত দূরে যাবে
তোমার ফেরার কষ্ট তত বেশি হবে।”


|| ইম-ম্যাচিউরিটির ভুল ট্রেন||

  • আরিফুল ইসলাম

(লেখাটি উত্তম পুরুষ স্টাইলে লিখা। লেখার মধ্যে ‘আমি’ টা আমাদের সবাইকে রি-প্রেজেন্ট করে। এই ‘আমি’ টা পার্সোনাল আমি না।)

লেখক পরিচিতি

আরিফুল ইসলাম

শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সাবেক, ছাত্র বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ২০১৩ ব্যাচ

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর