একজন মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু লাশটা দেশে আনা যাবে কিনা তাও অনিশচিত।

admin
  • আপডেট টাইম : নভেম্বর ০২ ২০১৯, ২০:৩৬
  • 1084 বার পঠিত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার পরিকল্পনা করলো তারা সারাবিশ্বে প্রচার করবে পূর্ব পাকিস্তানে জনগণের নির্বাচিত সরকারই দেশ পরিচালনা করছে। এই উদ্দেশ্যে তারা উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলো। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গেরিলা দল চিন্তা করলো তারা পূর্ব পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের মূল কার্যালয়ে অপারেশন চালাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ১৯ বছরের এক তরুণ যোদ্ধা অল্প কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে রাজারবাগের উল্টোদিকে মোমিনবাগে অবস্থিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের হেড অফিসটি বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিল।

নির্বাচন কমিশন উড়িয়ে দেওয়ার খবরটি বিবিসি, সিএনএন এর মত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে টানা দুইদিন ধরে প্রচার করা হয়েছিল। শহীদুল্লাহ হলের পেছনে ছিল এয়ার ফোর্সের রিক্রুটিং অফিস। পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল ওই ভবনটি। মাত্র তিনজন সঙ্গী নিয়ে ট্যাক্সিতে করে এসে উনিশ বছরের ওই তরুণ বিস্ফোরক দিয়ে ভবনটি উড়িয়ে দেন। যুদ্ধের পরে জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়, বর্তমানে সেখানে শহীদুল্লাহ হলের এক্সটেনশন বিল্ডিং।

উনিশ বছরের যে তরুণটির কথা বলছি তার নাম সাদেক হোসেন খোকা। সাদেক হোসেন খোকা — অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। সাদেক হোসেন খোকার জন্ম ১৯৫২ সালে। অধীনে অসংখ্য সফল অপারেশনের নায়ক রণাঙ্গনের গেরিলা যোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকাকে চেনে না।

সাদেক হোসেন খোকা রাজনীতিবিদ হিসেবে অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা- ৭ (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) আসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপি থেকে দাঁড়িয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন।

তাই সাধারণ মানুষ হয়ত তার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিতিটা জানে না। কিন্তু সরকারের তো অজানা না।

সাদেক হোসেন খোকা অসুস্থ, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, চিকিৎসকরা বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। খোকার শেষ ইচ্ছা ছিল দেশের মাটিতে মরবেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে তার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করা হয়েছিল অনেকদিন আগে। বাংলাদেশ সরকার তার পাসপোর্ট নবায়ন করেনি। তাই খোকা দেশে আসতে পারছেন না। দেশের মাটিতে মৃত্যুবরণ করার ইচ্ছাটি পূরণ হচ্ছে না। পাসপোর্ট কনস্যুলেটে আটকে রাখায় মরে গেলে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা খোকার লাশটা দেশে আনা যাবে কিনা তাও অনিশচিত।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর